X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুঁটকি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মন ভালো নেই

উজ্জল চক্রবর্তী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
২৮ নভেম্বর ২০২০, ১১:০১আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২০, ১২:৩১




শুঁটকি চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালা ও হাওর অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ মিঠা পানির মাছ ধরা পড়েছে। মেঘনা ও তিতাস নদীর তীরবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের লালপুর এবং নাসিরনগর সদরের গাঙ্কুল পাড়ায় শুরু হয়েছে শুঁটকি তৈরির কর্মযজ্ঞ। কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা। তবে করোনার কারণে গত মৌসুমে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি অবিক্রিত থাকায় এ বছরের শুঁটকি বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে রফতানির ক্ষেত্রে বাধা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়া জানা যায়, এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনার তীরবর্তী লালপুর এবং নাসিরনগরের হাওরপাড়ে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সারি-সারি মাচা। এসব মাচায় শোল, বোয়াল, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি। লবনবিহীন হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের শুঁটকি দেশ ছাড়াও ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে করোনার প্রভাবে গত মৌসুমে রফতানির পথ বন্ধ থাকায় অবিক্রিত রয়ে গেছে অন্তত ২০ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ শুকনো মাছ।

এর মধ্যে চলতি মৌসুম শুরু হয়েছে গত সেপ্টেম্বর থেকে। তবে বিগত বছরের ক্ষতির চিন্তা করে বসে নেই মাছ শুকানোর কাজে জড়িতরা। তারা বলছেন, ‘রফতানির পথ খোলা না হলেও এনজিওসহ দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে চড়া সুদে আনা বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের কাজে নামতে হয়েছে।

শুঁটকি লালপুরের ব্যবসায়ী সুজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের শুঁটকির ব্যবসা মাত্র শুরু হয়েছে। গতবারের পণ্য অবিক্রিত রয়েছে। মার্কেটে অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। ব্যবসায় অনেক লস হয়েছে। বিদেশে রফতানি বন্ধ থাকার কারণে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মার্কেটে করোনার প্রভাব পড়ায় দেশীয় পাইকারেরাও আসছে না আগের মতো। সরকার কোনও সময়েই আমাদের জন্য পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে এবারও ব্যবসায় লোকসান হতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানান ব্যবসায়ী সুজিত দাস।

অপর ব্যবসায়ী সুকমল দাস জানায়, গত বছরের শুঁটকি অনেক আছে। তবু কিছু টাকা লোন নিয়ে এ বছর ব্যবসা করছি। আগে দেশ-বিদেশে এই শুঁটকি রফতানি হতো। তবে করোনার কারণে কোথাও তা পাঠানো যাচ্ছে না। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে এ বছরেও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

তিনি বলেন, ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তার জন্য এনজিওসহ বিভিন্ন বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হচ্ছে। ব্যাংকে যদি লোনের জন্য যাই তাহলে আমাদেরকে লোন দেওয়া হয় না। তারা (ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) জমির কাগজপত্র চায়, কিন্তু আমাদের জমি নেই। এ কারণে বাধ্য হয়েই এনজিও থেকে লোন নিতে হয়। সহজ শর্তে তফসিলি ব্যাংকগুলো যদি ঋণ দিতো তাহলে আমরা বেঁচে যেতাম।

শুঁটকিপল্লি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান এজেডএম আরিফ হোসেন জানান, আমাদের এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনেক ভালো মানের শুঁটকি উৎপাদন হয়। তবে ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছেন। তারা বছরের ছয় মাস ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এই ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা-খান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে ঋণ দেয়, তাদের কিছু নীতিমালা আছে। ভূমি মালিকানা দেখে তারা ঋণ দেয়। এটি আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতি। শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ীরা মৌসুমি। সেজন্য তাদের ঋণ পেতে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে তারা যেন সহজ শর্তে ঋণ পান, সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যের বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, তিতাস ও মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন শুঁটকি পল্লীতে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের শ্রম আর ঘামে মৌসুমের আশ্বিন থেকে চৈত্রমাস পর্যন্ত ছয় মাসে অন্তত শত কোটি টাকার শুটকি তৈরি হয়।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে ১ লাখ ডলার পাবেন বাবররা!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে ১ লাখ ডলার পাবেন বাবররা!
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?