X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড

 ‘খুনিদের চিনি, নাম বললে জান থাকবে না’

আবদুর রহমান, টেকনাফ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:০২আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৪৬

কুতুপালং মেগা ক্যাম্পে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে। হত্যাকাণ্ডে প্রত্যাবাসনবিরোধী শক্তি জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজন এবং রোহিঙ্গা নেতারা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। 

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সদস্যরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের মধ্যে লম্বাশিয়ায় অবস্থিত এআরএসপিএইচ কার্যালয়ে একদল অস্ত্রধারী গুলি চালিয়ে হত্যা করে শীর্ষ নেতা মো. মুহিবুল্লাহকে (৫০)। 

রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা

নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে আমার ভাই সব সময় সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে ফোনে বড় ভাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল সন্ত্রাসীরা। প্রত্যাবাসন নিয়ে সোচ্চার থাকাই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনবিরোধী গ্রুপ রয়েছে, তারাই এ হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

হাবিব উল্লাহর দাবি, ‘হত্যাকারীরা মাস্ক পরা ছিল। তবু কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। কিন্তু নাম বললে আমারও জান থাকবে না।’  

এর আগে, ২০১৯ সালে মাসের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪-এ রোহিঙ্গা গণহত্যাবিরোধী মহাসমাবেশ হয়। পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ওই মহাসমাবেশে নেতৃত্ব দেন মুহিবুল্লাহ। এরপরেই আলোচনায় আসেন তিনি। সমাবেশে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, নিরাপত্তা, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরতসহ সাত দফা দাবি জানান। এরপর একই বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মুহিবুল্লাহর সাক্ষাৎ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সদস্যরা জানান, মুহিবুল্লাহ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মংডু টাউনশিপের সিকদারপাড়া গ্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে। তার বাবার নাম মৌলভী সিরাজ। মুহিবুল্লাহ ছিলেন ৯ সন্তানের জনক। মিয়ানমারে থাকতে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন বলে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের কাছে তিনি ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ’ নামে পরিচিত ছিলেন।

গুলি চালানোর আগে মুহিবুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিল তারা

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকারীরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ছিল। প্রত্যাবাসনের পক্ষে মুহিবুল্লাহ জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। আবার প্রত্যাবাসনবিরোধী একটি গ্রুপও রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় আছে, যারা এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, আপাতত ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে এ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে যাতে ক্যাম্পে অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে, লাশ দাফন শেষে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে নিজেদের দ্বন্দ্ব এবং দলীয় কোন্দলসহ অন্য কোনও কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যা থাকতে পারে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা কিছু নাম পেয়েছি, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে যেকোনও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী