সংরক্ষিত এলাকা কুমিল্লা কারাগারেও লেগেছে ঈদ আনন্দের ছোঁয়া। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুমিল্লা কারা কর্তৃপক্ষ ভিন্নরকম আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে। এবারই প্রথম প্রতিজন কয়েদি ঈদের বিশেষ খাবারে পাবেন ৩০০ গ্রাম করে গরুর মাংস। এছাড়া নারী বন্দিদের সঙ্গে থাকা ৯ শিশুকে দেওয়া হবে রঙ-বেরঙের নতুন পোশাক। আর নারী কয়েদিরা পেয়েছেন সাজার জন্য কসমেটিক ও অন্য উপকরণ।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা কারাগারে বর্তমানে দুই হাজার ১৫৮ বন্দি আছেন। এর মধ্যে ১০৮ বন্দি নারী। তাদের মধ্যে ৯ নারীর ৯ শিশুসন্তান কারাগারে মায়ের সঙ্গেই ঈদ করবে। এসব শিশুর ঈদের দিনের আনন্দের কথা চিন্তা করে মেয়ে শিশুদের জন্য নতুন ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ, গেঞ্জি ও ছেলে শিশুদের জন্য শার্ট-প্যান্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও টিশার্ট কিনেছে কারা কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে তাদের হাতে এসব উপহার তুলে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ১০৮ নারী বন্দিকে মেহেদি, টিপ, লিপস্টিক, আলতা, ক্রিম, চুড়ি, চুলের ব্যান্ড, চুলের ফিতাসহ বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকও দেওয়া হয়েছে। এই কারাগারের প্রায় ৪০ শতাংশ বন্দি তরুণী। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে মেহেদিতে হাত রাঙিয়েছেন। নিজেদের তারা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন ঈদ আনন্দ। তবে অনেকের কপালে ঈদ আনন্দের মাঝেও কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ।
এদিকে কারাগারে থাকা পুরুষ বন্দিদের জন্য বাড়ি থেকে নতুন পোশাক এসেছে। তাই কাউকেই নতুন পোশাক দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
কারা সূত্রে আরও জানা গেছে, কোরবানির ব্যবস্থা না থাকলেও কারাগারের বন্দিদের ঈদের দিন বিশেষ খাবার পরিবেশন করবে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এবারই প্রথম প্রত্যেক বন্দির জন্য ৩০০ গ্রাম করে গরুর মাংস বরাদ্দ করা হয়েছে। এই গরুর মাংসের ব্যবস্থার জন্য ঈদের আগেরদিন রাতেই গরু জবাই করা হয়েছে।
ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজের পর বিভিন্ন ধরনের পায়েস, সেমাই ও মুড়ির ব্যবস্থাও রয়েছে। এরপর প্রতিজনকে ২০ মিনিট করে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। দুপুরে বিশেষ খাবারে ৩০০ গ্রাম করে গরুর মাংস, পোলাও, মুরগি, ডাল, সবজি ও মুড়িঘন্ট পরিবেশন করা হবে।
রাতে বন্দিদের জন্য থাকবে মুরগির রোস্ট, পোলাও, মাছ, ডিম, ভর্তা, ভাত, ডাল। প্রত্যেক বেলা খাবারের শেষে কোমলপানীয় এবং মিষ্টি, চমচম খাওয়ানো হবে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ ঈদ আয়োজন ও বিশেষ খাবারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ঈদেও আমরা বিশেষ ব্যবস্থা করেছি। এবারের ঈদেও সব পুরুষ ও নারী কয়েদি ও তাদের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। কারাগারের মানুষ শুধু শাস্তি পাওয়ার জন্য নয়, শোধরাবার জন্যেও আসে। আমরা চাই তারাও আমাদের মতো ঈদ আনন্দের ভাগ পাক। যে কারণে এ আয়োজন। আমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ও দেখা করার সুযোগ করে দেবো। কেউ চাইলে ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটার মধ্যে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আছেন ৮৪ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন নারী বন্দি।
