X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

তালিকায় বিতর্কিত কাউন্সিলর, নাম প্রত্যাহার চান ১৪০ নেতাকর্মী

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
২৬ জুলাই ২০২২, ০২:৫৮আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, ০২:৫৮

দীর্ঘ সাড়ে ৯ বছর পর কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সম্মেলন অধিবেশন নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কারণ যুদ্ধাপরাধীর দেহরক্ষী ও বিএনপি-জামায়াতের ১৩০ জনকে কাউন্সিলর করা হয়েছে বলে অভিযোগে তুলেছেন তারা। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৪০ জন তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাকর্মী কাউন্সিলর তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম টাকার বিনিময়ে গোপনে কাউন্সিলরের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। দলের অনেক ত্যাগী এবং প্রবীণ নেতাদের নাম কাউন্সিলর তালিকায় নেই। তালিকায় স্থান পেয়েছেন যুদ্ধাপরাধীর দেহরক্ষী ও বিএনপি-জামায়াতের ১৩০ জন কাউন্সিলর।

শনিবার (২৩ জুলাই) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর কাউন্সিলরের তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে জমা দেওয়া আবেদনে বিতর্কিতদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

তালিকায় রয়েছে পেকুয়ার বহুল আলোচিত যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের নাম। যিনি পেকুয়া উপজেলা বিএনপির আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং ২০১৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তালিকায় নাম রয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সালাহ উদ্দিনের চাচা বিএনপি নেতা আসাদ উল্লাহ, বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান চৌধুরী, স্বাধীনতাবিরোধী আকতারুজ্জামান চৌধুরী, বিএনপি নেতা মো. আলম মাঝি, আজিজ উদ্দিন চৌধুরী, মেহের আলী, শাহাদাত, মো. শাহজাহান, জয়নাল আলী, আজিজুল হক, মহিউদ্দিন, জামায়াত নেতা করিম উল্লাহসহ ১৩০ জনের নাম।

নাম প্রত্যাহারের আবেদনে বলা হয়, ‘বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কাউন্সিলর হিসেবে নাম থাকায় বিব্রত ও ক্ষুব্ধ উপজেলার ত্যাগী ও পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতারা। যার কারণে কাউন্সিলর থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

নাম প্রত্যাহার চাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এসএম গিয়াস উদ্দিন, জিএম আবুল কাসেম, উম্মে কুলসুম মিনু, পেকুয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এটিএম বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, রাজখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলার সাবেক সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেসী, সাবেক সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক কাজী উল ইনসান, সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নাজিমুদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন এমএ, মগনামা ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী, উপজেলার সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দুল হক, ছাত্রলীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি মমতাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জাকেরুল ইসলাম ও উপজেলা যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক শেখ আহমদসহ ১৪০ জনের নাম।

আবেদনে পরীক্ষিত প্রবীণ অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে কাউন্সিলর না করায় নিন্দা জানানো হয়। যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার সাবেক সহ-সভাপতি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, প্রবীণ নেতা মাস্টার আশেক এলাহী, উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, জেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজীব, প্রবীণ নেতা রমিজ আহমদ, মগনামার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রশিদ আহমদ, উজানটিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী আকবর, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জুবাইদুল্লাহ লিটন, নাছির উদ্দিন বাদশা, আবুবক্কর, বেলাল উদ্দিন মিয়াজী ও মো. নাছির।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পেকুয়া উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু হেনা মোস্তফা কামাল সম্মেলন ঘিরে পুরো প্রক্রিয়ার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিমকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক টিমের প্রধান হিসেবে পেকুয়ার ছয় ইউনিয়নে গোপনে কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করে গঠনতন্ত্র অমান্য করে সম্মেলন করেছেন রেজাউল। ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকারী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম শহীদ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিতর্কিত সম্মেলনের আয়োজনের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কার্যকারিতা দেখা যায়নি। ফলে কাউন্সিলর হিসেবে বিতর্কিতদের সঙ্গে নাম রাখতে রাজি নন ত্যাগী ও পরীক্ষিত ১৪০ কাউন্সিলর।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানানো হয়েছে। রেজাউল করিমের এমন কর্মকাণ্ডে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন। এই সাংগঠনিক টিম বাতিল করে বিতর্কমুক্ত কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করে সম্মেলন আয়োজনের দাবি জানাই।’

জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সদস্য জিএম আবুল কাসেম বলেন, ‘কোনও প্রকার গঠনতন্ত্র না মেনে ইউনিয়ন সম্মেলন বিতর্কিত করার পর এবার উপজেলা সম্মেলন বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন রেজাউল করিম। যেখানে বিএনপি-জামায়াত নেতার পাশাপাশি বাইরের লোকজনকেও কাউন্সিলর করেছেন তিনি। এ কাউন্সিলর তালিকা বাতিল করে স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করার দাবি জানাই।’

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ তালিকায় কয়েকজন বিএনপি-জামায়াত নেতার নাম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম গত সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তারপরও তাকে নিয়ে যেহেতু বিতর্ক আছে, সেহেতু তিনিসহ আরও যারা বিতর্কিত আছে, তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে তা জেলা আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে মীমাংসার সুযোগ রয়েছে। বড় দল হিসেবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় যে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারে।’

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কাউন্সিলর তালিকায় কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা দলের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলবো।’

/এএম/এমএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে ঝুলছে দুই হাজার ৮৭ মামলা
চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে ঝুলছে দুই হাজার ৮৭ মামলা
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের ধরপাকড়
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের ধরপাকড়
সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ভালোটা সরিয়ে রাখা হচ্ছে নিম্নমানের চাল, দুদকের মামলা
সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ভালোটা সরিয়ে রাখা হচ্ছে নিম্নমানের চাল, দুদকের মামলা
ইসরায়েলি হামলার দ্বারপ্রান্তে রাফাহ: জাতিসংঘ
ইসরায়েলি হামলার দ্বারপ্রান্তে রাফাহ: জাতিসংঘ
সর্বাধিক পঠিত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!