X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ ধরনের অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গারা, ১১৫টি হত্যাকাণ্ড

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
২৫ আগস্ট ২০২২, ১০:০০আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২, ১০:০০

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়েছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। এ পর্যন্ত ১১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ নিয়ে সন্ধ্যা নামতেই আতঙ্ক ভর করে স্থানীয়দের মাঝে। রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে। মাদক ব্যবসা, অপহরণ, ধর্ষণ, মারামারি এবং বিশৃঙ্খলা নিত্যদিনের ঘটনা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মাঝেমধ্যে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তবে আগের তুলনায় ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ বেড়েছে।

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট)। কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল মিয়ানমার সরকার। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন আজো শুরু হয়নি। এতে দীর্ঘ হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যত দেরি হচ্ছে তত বাড়ছে অপরাধ। ক্যাম্পে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, গ্রুপে-গ্রুপে গোলাগুলি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক, অস্ত্রসহ নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। 

আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গত চার মাসে ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মো. ইব্রাহীম (৩০) নামে এক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন হাবিব উল্লাহ (২০) নামে এক রোহিঙ্গা। ৪ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ১ আগস্ট বিকালে উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নুরুল আমিন (২৬) নামে এক রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গত ২২ জুন কথিত আরসা নেতা মোহাম্মদ শাহ এবং ১৫ জুন একই গ্রুপের সদস্য মো. সেলিম (৩০) সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ১৬ জুন রাতে উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. সলিমুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হন। ১০ জুন কুতুপালংয়ের চার নম্বর ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ সমিন (৩০) এবং ৯ জুন রোহিঙ্গা নেতা আজিম উদ্দিনকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মে মাসে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা সানা উল্লাহ (৪০) ও সোনা আলী (৪৬)। এসব ঘটনায় ৯টি মামলায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সন্ধ্যা নামতেই আতঙ্ক ভর করে স্থানীয়দের মাঝে

পুলিশ বলছে, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচার ও আধিপত্য বিস্তারসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু রোহিঙ্গা। 

রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধের কথা তুলে ধরে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘২০১৭ থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, রোহিঙ্গারা খুনোখুনি, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং ধর্ষণসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত মামলা হয়েছে দুই হাজার ৪৩৮টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা পাঁচ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে অস্ত্র মামলা ১৮৫টি, মাদক মামলা এক হাজার ৬৩৬টি, ধর্ষণ মামলা ৮৮টি, হত্যা মামলা ১১৫টি, অপহরণ ও মুক্তিপণ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩৯টি। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য। এরপরও অপরাধ কমছে না।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে দলবেঁধে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছিল রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্মম নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। ওই সময় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। অবশ্য এর আগে সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মানবিকতা দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে। এটি খুব সাময়িক। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছর এভাবে বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে থাকবে তারা, এটি মেনে নেওয়া যায় না। কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে। এখানে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েছে। তাদের দমানো যাচ্ছে না।’

নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গারা

উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম. গফুর উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর রোহিঙ্গাদের এখানে দেখতে চাই না। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে চলে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের আতঙ্ক কাটবে না।’

প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে হামলার অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। এ সময় গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তাদের নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন। গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বেড়েছে আরও দেড় লাখের বেশি। 

শুরু থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের অসহযোগিতা ও কূটনৈতিক নানা কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

/এএম/
সম্পর্কিত
অভিনেতা জোভান-মাহিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
প্রতিদিন খোয়া যাচ্ছে সহস্রাধিক মোবাইল, উদ্ধারে আগ্রহ কম পুলিশের
গাড়ি ফেরত না পেয়ে বিদিশার মামলা, চালক রিমান্ডে
সর্বশেষ খবর
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ওয়ারীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
ওয়ারীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা