X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
আরেক মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে দেশ

আগামী নির্বাচনের আগেই ট্রেন যাবে কক্সবাজার

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০৫ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২২, ১৬:৫৮

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই ট্রেন যাবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এই টার্গেট নিয়েই কাজ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ৫০ কিলোমিটারের বেশি রেললাইন এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে এই মেগা প্রকল্পের কাজ ৭৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি প্রকল্প কর্মকর্তাদের। বাকি ২৪ শতাংশ কাজ দ্রুত শেষ করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ চালু হলে শুধু পর্যটন খাতে সম্ভাবনা বাড়বে তা নয়;  লবণ, মৎস্য, কৃষিসহ অন্যান্য খাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। এদিকে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে চান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এরপর জুলাই কিংবা আগস্টে শুরু করতে চান ট্রেন চলাচল। এমন লক্ষ্য সামনে রেখে চলছে প্রকল্পের কাজ।

আগামী নির্বাচনের আগেই ট্রেন যাবে কক্সবাজার

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন থাকছে আটটি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর ও উখিয়া। এ জন্য সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়া এই রেলপথে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৫০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। অধিকাংশ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শেষ হবে। অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। আমরা চেষ্টা করছি  ২০২৩ সালের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে। একইসঙ্গে রেল স্টেশনগুলোর নির্মাণকাজও চলমান আছে।’

আগামী নির্বাচনের আগেই ট্রেন যাবে কক্সবাজার

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ ও সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে মিয়ানমার সরকারের সম্মতি না থাকায় আপাতত রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ হচ্ছে না। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

এদিকে, কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এর পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের কাজ শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা লাগেজ স্টেশনের লকারে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

আগামী নির্বাচনের আগেই ট্রেন যাবে কক্সবাজার

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দাবি করেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে। এরপরও কাজ চলছে। একইভাবে সাগরপথে জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অন্য দেশ থেকে মালামাল আনতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

রেললাইনটির কাজ দ্রুতগতিতে চললেও গলার কাঁটা হিসেবে ধরা হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত সেই কালুরঘাট রেলওয়ে সেতুটি। এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনেকের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘এই অবস্থায় বড় ইঞ্জিনের ট্রেন এই রেল সেতু দিয়ে পার হবে না। ছোট ইঞ্জিন দিয়ে পার করতে হবে। ছোট ইঞ্জিন দিয়েও পার না হলে সেতুর শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।’

এদিকে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর পাশে আরেকটি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হবে। নতুন সেতুটি হবে পদ্মা সেতুর আদলে। এই সেতু নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ৭৮০ মিটার। ভায়াডাক্ট হবে পাঁচ দশমিক ৬২ মিটার এবং স্প্যান হবে ১০০ মিটার। আর সেতুর উচ্চতা হবে ১২ দশমিক দুই মিটার। সেতুর ওপরে গাড়ি চলবে, নিচে দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুটি নির্মাণে সব ব্যয় বহন করবে কোরিয়ান সরকার। শিগগিরই এই সেতু উদ্বোধন করা হবে।’

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. এখলাছ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে অবশ্যই এলাকার কৃষিতে পরিবর্তন আসবে। ট্রেনে কম টাকায় কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।’

পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘রেললাইন চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কমবে। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে এই সড়কে যানবাহনের চাপ খুব বেড়ে যায়। তখন দুর্ঘটনাও বেশি ঘটে।’

/এফআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিএনপির চিন্তাধারা ছিল অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো: প্রধানমন্ত্রী
ঈদের ছুটি শেষ, কাজে ফিরছে মানুষ
শেষ দিনে স্বস্তির ট্রেনযাত্রা
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন