X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
ডায়ালাইসিস ফি নিয়ে আন্দোলন

‘ডায়ালাইসিস ফি ৩০০ শতাংশ বাড়ানোর তথ্য গুজব’

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:০৯আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:২৩

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) সেন্টারে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর কোনও সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে একটি মহল ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর গুজব ছড়িয়ে রোগী ও স্বজনদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। এজন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন তারা।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তবে পিপিপি কেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এবারও পাঁচ শতাংশ ফি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।

ডায়ালাইসিস ফি ৩০০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে শামীম আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডায়ালাইসিস ফি ৩০০ শতাংশ বাড়ানোর তথ্য গুজব। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল একটি মহল। এ নিয়ে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।’

ফি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি উল্লেখ করে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাকে বলেছেন এবার ডায়ালাইসিস ফি বাড়বে না। তবে পিপিপি কেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এবারও পাঁচ শতাংশ ফি বাড়বে। আগে প্রতি সেশনে ডায়ালাইসিস ফি নেওয়া হতো ৫১০ টাকা, এবার ২৫ টাকা বেড়ে তা হবে ৫৩৫ টাকা। তবে এখন পর্যন্ত এই পাঁচ শতাংশ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের কর্মকর্তাদের বলেছি, বৈঠকের আগে যাতে ফি না বাড়ায়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে, এরপর সিদ্ধান্ত।’

চমেক হাসপাতালে একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনে ২০১৭ সালে ভারতীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেডস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে পিপিপি চুক্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চুক্তি অনুযায়ী হাসপাতালে ৩১টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করে স্যান্ডর। ১০ বছর পরিচালনার পর সরকারের কাছে এই প্রতিষ্ঠান হস্তান্তরের কথা রয়েছে তাদের।

ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন

চুক্তি অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশে দরিদ্র রোগীদের প্রতি সেশনে ৫১০ টাকায় ডায়ালাইসিস দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতি সেশনে দুই হাজার ১৮০ টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। বছরে সাড়ে ছয় হাজার সেশন ভুর্তুকিতে ডায়ালাইসিস করানোর চুক্তি হয় স্যান্ডরের সঙ্গে।

রোগী ও স্বজনদের দাবি, গত ১ জানুয়ারি থেকে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্যান্ডর। ভুর্তুকির সেশন ফি ৫১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৩৫ টাকা এবং ভর্তুকি ছাড়া দুই হাজার ৭৮৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৯৩৫ টাকা করার ঘোষণা দেয় তারা। যেসব রোগীর মাসে ১২টি সেশন ডায়ালাইসিস করতে হতো তাদের অন্তত ১০টি ছিল ভর্তুকিতে, দুটি ছিল ভর্তুকি ছাড়া। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ১২ সেশনের মধ্যে ছয়টি পাবে ভর্তুকিতে, বাকি ছয়টি পাবে ভর্তুকি ছাড়াই।

এ বিষয়ে স্যান্ডর কার্যনির্বাহী (অর্থ) মো. নুরুচ্ছফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সাড়ে ছয় হাজার সেশন ভর্তুকিতে ডায়ালাইসিস করানোর চুক্তি আছে সরকারের সঙ্গে। তবে এখানে মাসে ডায়ালাইসিস করাতে হয় তিন হাজারের বেশি। সে হিসাবে বছরে ৩৬ হাজারের বেশি সেশন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। তবে সব রোগীকে ভর্তুকিতে ডায়ালাইসিস করা হয় না। কোনও রোগীর মাসে ৮ সেশন ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলে রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে ৫ সেশন ভর্তুকিতে এবং ৩ সেশন ভর্তুকি ছাড়া করানো হয়। বলা যায় সব রোগীকে ভাগ করে সাড়ে ছয় হাজার সেশন ডায়ালাইসিস করানো হয়। করোনাকালীন দুই বছর সাড়ে ছয় হাজার সেশন থেকে বাড়িয়ে আরও বেশি রোগীকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। করোনার পর তা কমিয়ে আবার সাড়ে ছয় হাজারে নিয়ে আসা হয়। আমাদের দাবি আরও বেশি সেশনের জন্য ভর্তুকি দেওয়ার। রোগী বেশি এ কারণে কম সেশনে ভর্তুকি দিয়ে এক জানুয়ারি থেকে ডায়ালাইসিস করানোর উদ্যাগ নেওয়া হয়। তবে বিষয়টি রোগী ও স্বজনরা মানেননি। আন্দোলনের কারণে আগের মতো চালানোর জন্য চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন আগের মতো চলছে।’

এদিকে, স্যান্ডরের ঘোষণায় ডায়ালাইসিস রোগী ও স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা। ১০ জানুয়ারি হাসপাতালের সামনের মূল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রোগী ও স্বজনরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলন থেকে মো. মোস্তাকিম (২২) নামে এক নারী রোগীর ছেলেকে আটক করে পুলিশ। পরদিন পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় মোস্তাকিমকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। গত রবিবার মোস্তাকিম জামিনে কারামুক্ত হন।

চমেক হাসপাতালে বেসরকারি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র কেন এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক শামীম আহসান বলেন, ‘হাসপাতালে সরকারি সাতটি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। কিন্তু মেশিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ইতোমধ্যে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো নিয়ে ১৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন হয়েছে। সরকারিভাবে সর্বমোট ২০টি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানোর কাজ চলছে। কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, আগামী মাস থেকে রোগীরা সেবা পাবেন। হাসপাতালের নিজস্ব ডায়ালাইসিস মেশিন চালু হলে স্যান্ডরের মেশিনের ওপর নির্ভরতা কমবে।’

ফি কমানোর আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে যাওয়া মোস্তাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মায়ের দুটি কিডনি নষ্ট। ছয় বছর ধরে ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। মাসে ১২ সেশনে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। এর মধ্যে আগে ৮-১০ সেশন পাওয়া যেতো ভর্তুকিতে। ভর্তুকিতে ৫১০ টাকার স্থলে ১ জানুয়ারি থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫৩৫ টাকা। ভর্তুকি ছাড়া ছিল দুই হাজার ৭৮৫ টাকা। যা এখন দুই হাজার ৯৩৫ টাকা। আগে মাসে ভর্তুকিতে ১০-১০টি সেশনে ডায়ালাইসিস করানো যেতো। ১ জানুয়ারি থেকে বলা হয় ভর্তুকিতে ছয়টি এবং ভর্তুকি ছাড়া ছয়টি সেশনে ডায়ালাইসিস করাতে হবে। এত টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করানোর সামর্থ্য নেই আমার। এ কারণে অন্যদের সঙ্গে আন্দোলনে গিয়েছিলাম।’

গ্রেফতার হওয়া মোস্তাকিম

মীরসরাই উপজেলার বাসিন্দা প্রফুল্ল রঞ্জন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্যান্ডরের নয়, চমেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের মেশিনে ডায়ালাইসিস করাই আমি। এখানে প্রতি সেশনে ফি দিতে হয় ৪১৬ টাকা। এখানে চারটি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। সেখানে সীমিত আকারে রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো হয়।’

পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা রুপম কান্তি শীল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্যান্ডর ১ জানুয়ারি থেকে ঘোষণা দিয়েছিল অর্ধেক ভুর্তুকিতে বাকি অর্ধেক ভুর্তুকি ছাড়া ডায়ালাইসিস করাবে। তবে রোগীদের বিক্ষোভের পর এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে তারা। এখন আগের নিয়মে চলছে। অর্থাৎ তিনটি ভর্তুকিতে ডায়ালাইসিস করানোর পর একটি ভর্তুকি ছাড়াই করাচ্ছে। তবে প্রতি সেশনে পাঁচ শতাংশ করে ফি বাড়ানো হয়েছে।’

একেকটি ডায়ালাইসিস মেশিনের দাম ১০-১৫ লাখ টাকার বেশি নয় উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম মিনহাজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাত্র ছয়-সাত কোটি টাকা হলে চমেক হাসপাতালে পরিপূর্ণ ডায়ালাইসিস সেন্টার করা সম্ভব। সামান্য টাকার জন্য পুরো চট্টগ্রামের কিডনি রোগীরা স্যান্ডর নির্ভর হয়ে পড়েছে। বিষয়টির দিকে সরকারকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

/এএম/ 
সম্পর্কিত
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
গরমে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী
গরমে ডায়রিয়া রোগী আরও বাড়ার শঙ্কা
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ