ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে মশা মারতে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রচলিত ওষুধ প্রয়োগে মশা নিধন হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। এবার মশা নিধনে ‘ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস সেরোটাইপ ইসরায়েলেন্সিস’ (বিটিআই) ট্যাবলেট ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে।
শিগগিরই এ ট্যাবলেট ব্যবহার শুরু করা হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এবার মশা নিধনে বিটিআই ট্যাবলেট ব্যবহারের দিকে যাচ্ছি। বুধবার (২৬ জুলাই) বিটিআই সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের সভা করেছি। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক পাঁচ লাখ টাকার বিটিআই সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে সফলতা পাওয়া গেলে সারা বছরই এ ট্যাবলেট ব্যবহার করা হবে।’
চসিক কর্মকর্তারা জানান, বিটিআই এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া টেকনোলজি অণুজীব। যা মশার লার্ভা নিধনে খুবই কার্যকারী বলে শুনেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় ১৯৯৬ সাল থেকে এটি ব্যবহার করে মশা নিধনে সাফল্য পেয়েছে।
চসিক সূত্র জানায়, মশা নিধনে সারা বছরই দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে আসছিল চসিক। এর মধ্যে একটি অ্যাডাল্টিসাইড অপরটি লার্ভিসাইড। সম্প্রতি গবেষকদের পরামর্শে ভেষজ ওষুধ মসকুবান ব্যবহার শুরু করেছে। বর্তমানে ১০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড, তিন হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও পাঁচ হাজার লিটার ন্যাপথা মজুত রয়েছে। ন্যাপথা এসব ওষুধের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।
আবুল হাশেম বলেন, ‘মশা নিধনে স্প্রে ম্যান ছিল আগে ২২০ জন। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৪০০ জন করা হয়েছে। মশা নিধনে ৩০০টি স্প্রে মেশিন এবং ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামীয় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে পত্রিকায় কয়েকদিন পর পর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট ও আরবান ভলান্টিয়ারের যৌথ টিমের মাধ্যমে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ও নগরীর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিদিন লিফলেট বিতরণ ও হ্যান্ড মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ড্রোন ব্যবহার করে যেখানে পানি জমে আছে ও লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে জরিমানা করা হচ্ছে। ৫ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১২৭টি মামলায় ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মশার জীবন পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জ্বর দেখা দিলে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ডেঙ্গু আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘চসিকের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণ দেখা দিলেই পরীক্ষা করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে ডেঙ্গু ভালো হয়।’
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৪৪৪ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ে এক হাজার ৯৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত রোগটিতে মারা গেছে ২৫ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসে ১৬ জন মারা গেছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে নগরীতে এক হাজার ৭৫৫ ও জেলায় ৬৮৯ জন। পুরুষ এক হাজার ১২২, নারী ৬৯৬ ও শিশু ৬২৬ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ছয়, নারী পাঁচ ও শিশু ১৪ জন।