ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমসে ভারতীয় যাত্রী ভাইবোনকে জোর করে মদপান করানোর চেষ্টার ঘটনায় কাস্টমসের সেই সিপাহি মো. রুবেলকে বদলি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) আখাউড়া শুল্ক স্টেশন থেকে তাকে কুমিল্লা কাস্টমস কমিশনার কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গতকালের (বুধবার) ঘটনাটি ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা সঙ্গে একটি করে মদের বোতল নিতে পারবেন এমন নিয়ম রয়েছে। ভারতীয় দুই যাত্রীর (ভাইবোন) ব্যাগ তল্লাশি করে দুটি মদের বোতল (হুইস্কি) পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।’
বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার জোগেন্দ্রনগর এলাকার সঞ্জিত সাহা, তার বোন ঐশী সাহা ও তাদের আরেক আত্মীয় বৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ সময় তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে একটি করে মদের বোতল পাওয়া যায়। এগুলো নিতে হলে তাদের এক হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানানো হয়।
তবে প্রত্যেক বিদেশি যাত্রী একটি করে মদের বোতল আনতে পারবে—এমন নিয়মের কথা বলার পর রুবেল নামে একজন কাস্টমস সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে রুবেল বলতে থাকেন তারা মাদক ব্যবসায়ী। নিজের জন্য আনা হয়ে থাকলে তাদের এখনই খেতে (পান করতে) হবে। উত্তেজিত রুবেল তখন মদের বোতলের ছিপি খুলে পানি মিশিয়ে ঐশীকে খেতে বলেন। ঐশী এতে বিব্রত হন। পরে প্রতিবাদ করেন। সঞ্জিতের কাছেও মদের গ্লাস নিয়ে যান রুবেল। তখন ভারতীয় ওই যাত্রীদের নানারকম ভয়ভীতি দেখানো হতে থাকে। একপর্যায়ে ব্যাগে নতুন কাপড় আছে কিনা সেটিও জানতে চান ওই কাস্টমস সদস্য। খবর পেয়ে সেখানে সেই ভারতীয়দের পরিচিতরা ছুটে যান। এ সময় কাস্টমসের এক কর্মকর্তা তার সহকর্মীকে এমন আচরণের জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ান।
সঞ্জিত সাহা বলেন, ‘নিয়ম মেনেই মদ আনা হয়। কিন্তু কাস্টমসের একজন বলছিল, এটা নিতে হলে এক হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া নেওয়া যাবে না। এতে রাজি না হওয়ায় আমার বোনকে জোর করে মদপান করাতে চায়। আমাকেও পান করতে বলে। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
ঐশী সাহা বলেন, ‘আমি বলেছি, আমার বয়স ১৮ বছর পার হয়েছে। মদপান করতে হলে হলে বাসায় করবো। আপনাদের সামনে কেন করবো? এরপর তারা নতুন কাপড় কী কী আছে জানতে চায়। আমি বলেছি, বেড়াতে এলে নতুন কাপড় আনা যাবে না—এমন কোনও নিয়ম আছে নাকি?’
ওই সদস্যের এমন আচরণের বিষয়টি আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেই সদস্যকে আখাউড়া শুল্ক স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করে নেন।