কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গান গ্রুপ কমান্ডার মো. জাকারিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত একটি জি-৩ রাইফেল ও ৫ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে উখিয়া বালুখালী ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে কক্সবাজার র্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার কতিপয় সদস্য অস্থিরতা ও নাশকতার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র নিয়ে এসেছে। এর সূত্র ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে আরসা সন্ত্রাসী মো. জাকারিয়াকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার জাকারিয়া ১০ নম্বর ক্যাম্পের এফ ১৭ ব্লকের বাসিন্দা মৃত আলী জোহরের ছেলে। তার দেওয়া তথ্যমতে একটি ঘর থেকে জি-৩ রাইফেল ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। রাইফেলটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীসহ সেদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করে থাকে বলে ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জাকারিয়া জানান, ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ১০ নম্বর ক্যাম্পে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠলে তিনি আরসায় যোগদান করেন। বাংলাদেশে প্রবেশের প্রথম দিকে তিনি আরসার সোর্স এবং পরবর্তীতে গান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০-এর ব্লক এফ/১৭-এর ব্লক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। এ সময় তার নেতৃত্বে আরসার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হতো।
ব্রিফিংয়ে র্যাব অধিনায়ক জানান, ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হয়। এরপর ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে জাকারিয়া পালিয়ে পুনরায় মিয়ানমারে চলে যান। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন কিলিং মিশন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। জাকারিয়া অস্ত্র চালনায় দক্ষ হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংগঠিত বিভিন্ন নাশকতা, মারামারি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করতেন বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
গ্রেফতার জাকারিয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও দুবার কারাভোগ করেছেন বলেও জানা যায়।