X
সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চিকিৎসক-নার্স সংকট, অচল আইসিইউ, ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম 
২৬ মে ২০২৫, ০৮:০১আপডেট : ২৬ মে ২০২৫, ০৮:০১

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ও যন্ত্রপাতি সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। সরকারি হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায় ১৮৪০ সালে ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করা হয়। ১৯৮৭ সালে এটি উন্নীত হয় ৮০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে। এরপর ধাপে ধাপে তা ১৫০ এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে ২৫০ শয্যা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। তবে সেই অনুযায়ী চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ও যন্ত্রপাতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন আজও হয়নি। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনীয় শয্যা থাকলেও নেই পর্যাপ্ত রোগী। এর কারণ নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। ১৮ শয্যার আইসিইউ বেড থাকলেও গত দুই মাস ধরে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। আইসিইউ সেবার জন্য আসা রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে দৈনিক পাঁচ হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। অথচ শয্যা সংখ্যা দুই হাজার ২০০টি। ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হন ১৪০-১৫০ জন। কারণ হিসেবে রোগীরা জানান, এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নেই। আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে রোগীরা এখানে না এসে চমেক হাসপাতালে যান। সেখানে সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন ৬২ জন। যেখানে নীতিমালা অনুযায়ী থাকার কথা ১৭৭ জন। এর মধ্যে ২২ চিকিৎসক রয়েছেন ডেপুটেশনে, অর্থাৎ অন্যত্র কর্মরত। আবার আইসিইউ শয্যা অচল। পাশাপাশি নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম। যা হাসপাতাল পরিচালনায় বড় বাধা।

আইসিইউ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনবল সংকটের পাশাপাশি আইসিইউ বিভাগে ১৮ শয্যা থাকলেও বেশিরভাগই অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় আইসিইউ শয্যাগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কয়েক মাসের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় অধিকাংশ যন্ত্রপাতি। এ অবস্থায় গত দুই মাস ধরে আইসিইউ সেবা মিলছে না। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ২২টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে সচল আছে দুটি। যেগুলো প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা ব্যবধানে অচল হয়ে পড়ে। ৩৩টি বাইপ্যাপ মেশিনের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। ৩৯টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার মধ্যে অচল ৩৬টি। গত কয়েক বছর আইসিইউ ইউনিট মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত আট মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে অন্তত পাঁচবার চিঠি পাঠালেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুরু থেকেই হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সেবা দেওয়ার যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিল না। রোগীকে আইসিইউ সেবা দেওয়ার জন্য সমন্বিত চিকিৎসা দরকার। অথচ হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগ, নেফ্রোলজি বিভাগ ও নিউরোলজি বিভাগ নেই। এখন হৃদরোগে আক্রান্ত কোনও রোগীকে যদি আইসিইউতে ভর্তি করা হয়, এক্ষেত্রে তার পরিপূর্ণ সেবা নিশ্চিত করার জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয়। আবার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কেউ যদি আইসিইউতে ভর্তি হন, তার জন্য নিউরোলজিস্ট বা নিউরো সার্জারির চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া আইসিইউতে কিডনি রোগীর জন্য ডায়ালাইসিস মেশিন থাকতে হয়, এখনে তো নেফ্রোলজি বিভাগই নেই। তাই এসব সীমাবদ্ধতার কারণে আইসিইউর পূর্ণাঙ্গ সেবা শুরু থেকেই দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা, হৃদরোগ, স্ট্রোক বা শ্বাসকষ্টজনিত জটিল রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী সরকারি এই হাসপাতালের আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। যেখানে চিকিৎসা ব্যয় গড়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রতিদিন। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত রোগীরা সেই ব্যয় বহনে অক্ষম। ফলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে হয় চিকিৎসাসেবা ছাড়াই।

নগরের জামালখান এলাকার বাসিন্দা আবু মুসা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল হতে পারতো আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। সেজন্য জেনারেল হাসপাতাল বিকল্প। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও নানা সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।’

হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া ও আইসিইউ ইউনিটের কনসালট্যান্ট ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই হাসপাতালে রোগীদের পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়। এ ছাড়া চিকিৎসক ও জনবল সংকট আছে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভেন্টিলেটর ছাড়া আমরা আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করতে পারি না। যে কয়েকটি চলছে, সেগুলোও বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রায় দুই মাস ধরে সেবা বন্ধ আছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছি। তবে এখনও কোনও সাড়া মেলেনি। ১০টি আইসিইউ শয্যা সচল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে কক্ষে আইসিইউ শয্যা রাখা হয়েছে। সেটির প্রবেশমুখে ভবনটির পলেস্তারা খসে পড়ছে। কারণ করোনার সময়ে তড়িঘড়ি করে কক্ষটি তৈরি করে আইসিইউ সেবা চালু করা হয়েছিল। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। আবার চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী সংকটও আছে। এর মাঝে যেসব রোগী আসছেন, আমরা সর্বোচ্চ সেবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

/এএম/
সম্পর্কিত
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে দুদকের অভিযান
সরকারি হাসপাতাল পরিচ্ছন্নের কাজ বেসরকারি খাতে দেওয়ার পরিকল্পনা 
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান
সর্বশেষ খবর
খুলনায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
খুলনায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় উদ্ধার কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ নিহত ৩০
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় উদ্ধার কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ নিহত ৩০
গরমেও ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, ১০ টিপস জেনে নিন
গরমেও ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, ১০ টিপস জেনে নিন
ঈদযাত্রা: ৫ জুনের ট্রেনের টিকিট বিক্রি আজ
ঈদযাত্রা: ৫ জুনের ট্রেনের টিকিট বিক্রি আজ
সর্বাধিক পঠিত
সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে সব ধরনের আমদানি-রফতানি
সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে সব ধরনের আমদানি-রফতানি
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি
রাস্তার পাশাপাশি মেট্রোস্টেশনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাস্তার পাশাপাশি মেট্রোস্টেশনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন: যুক্তরাষ্ট্র
বিক্ষোভে উত্তাল সচিবালয়
বিক্ষোভে উত্তাল সচিবালয়