পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম তৈরির ঘটনায় চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানার চার কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২ জুন) রাতে নগরের চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল এলাকায় অবস্থিত ওয়েল ফেব্রিকস কারখানায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করে চান্দগাঁও থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
কাভার্ডভ্যানের ভেতরে বেশ কিছু কাপড়ের রোল রয়েছে। এসব কাপড় ওয়েল ফেব্রিকস কারখানায় তৈরি করা হয়। যেগুলো দিয়ে ‘কেএনএফের ইউনিফর্ম’ তৈরি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওয়েল ফেব্রিকস কারখানাটি চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন।
তবে অভিযানের বিষয়ে পুলিশের কোনও কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে তিন দফায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কেএনএফের প্রায় অর্ধলাখ ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে নামে। কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরির কাপড় ওয়েল ফেব্রিকস কারখানায় তৈরি হয়েছিল এমন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির চার জন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু কাপড়ের রোল। যেগুলো দিয়ে কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়। আটককৃতদের চান্দগাঁও থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।’
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক কারখানার চার জন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানাতে পারবো। আটককৃতদের নাম-পরিচয় পরে জানাবো।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে তিন দফায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কেএনএফের প্রায় অর্ধলাখ ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়। এর মধ্যে গত ২৭ মে রাতে পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডে অবস্থিত নুর ফ্যাশন অ্যান্ড গার্মেন্টস কারখানা থেকে কেএনএফের ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, পোশাকগুলো কেএনএফের ইউনিফর্ম। মহালাসিন মারমা নামের এক সন্ত্রাসী ৫০ লাখ টাকা চুক্তিতে এগুলো তৈরির অর্ডার দেয়। এ ঘটনায় নুর ফ্যাশন অ্যান্ড গার্মেন্টস কারখানার মালিক মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার (০১ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহীম খলিল শুনানি শেষে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ওই দিনই রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন।
এর আগের দিন ২৬ মে রাতে নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি ইউনিফর্ম উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি পোশাক জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ১৮ মে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এজাহারে পুলিশ বলেছে, দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের অর্ডার নেওয়া হয়। এ ঘটনায় কারখানাটির মালিকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। এর মধ্যে সাহেদুল কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির অর্ডার এনেছেন। এই মামলায় গ্রেফতার তিন জন ছাড়াও রাঙামাটির মহালাসিন মারমাকে আসামি করা হয়।