ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল থেকে সড়ক ও রেলপথে বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের চট্টগ্রাম থেকে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর বাকলিয়া গোলচত্বর মোড়ে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। গণপরিবহন সংকটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যাত্রীর সংখ্যা বেশি থাকায় কোন কোন পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বাড়ি ফেরার অগ্রিম টিকিট না পেয়ে লোকজনকে ট্রেনে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্বরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ইন্সপেক্টর আমান উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সব কটি ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেলেও জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে না ছাড়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন ওই ট্রেনের যাত্রীরা। বিজয় এক্সপ্রেস সোয়া ৯টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ছেড়ে গেছে ১০টা ৪৩ মিনিটে। বাকি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। এবার চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কোন যাত্রীকে ছাদে এবং বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সকাল থেকে আরএনবি এ লক্ষ্যে কাজ করছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও ট্রেনে অগ্রিম টিকিট নেই। সব আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ট্রেন ছাড়ার আগে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ১৬টি আন্তনগর, একটি স্পেশাল এবং চারটি মেইল ট্রেনে দৈনিক ১৫ হাজার যাত্রী গন্তব্যে যাচ্ছে। কোন যাত্রীকে ছাদে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।’
এদিকে, বাস স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি ইপিজেডে কারখানায় চাকরি করি। আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী এলাকায়। শাহী পরিবহনে এ পথে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া নেওয়া হয় সাড়ে ৩০০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা।’
কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে বাকলিয়া নতুন ব্রিজ গোগচত্বর এলাকায়। এ সড়কে সকাল থেকে ব্যাপক যানজট লেগে আছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টিম যানজট নিরসনসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করছে।
কবির হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বাড়ি বাঁশখালী উপজেলায়। স্বাভাবিক সময়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া। ঈদে সেটি বেড়ে নেওয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। স্পেশাল সার্ভিস নাম দিয়ে এই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।’
দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম বলছেন যাত্রীরা। এ কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
নগরীর মোহরা রাস্তার মাথা থেকে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাইগামী বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। রাস্তার মাথা থেকে রাউজান পাহাড়তলী পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে লোকাল সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া ৩৫ টাকা। বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল হাসান জানান, পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত বাস ভাড়া দাবি করে যাত্রীদের ভোগান্তি সৃষ্টি করতে দেখা যায়। যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব এবং বিআরটিএ নির্ধারিত বাসভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে বিআরটিএর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করা, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক ভাড়া আদায়ের অভিযোগে পৃথক ৩ টি মামলায় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
নগরবাসীর নিরাপত্তা, যাত্রীসাধারণের ন্যায্য ভাড়া নিশ্চিতকরণ এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয় বলেও জানান তিনি।