বন্দর নগরী চট্টগ্রামে চলতি মাসে চার জনের শরীরে করোনাভাইরাস (কোভিড) শনাক্ত হয়েছে। সামনে আক্রান্তের হার আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা চিকিৎসকদের। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো। সরকারি হাসপাতালগুলোতে আছে করোনা পরীক্ষায় কিট সংকট। একইভাবে চিকিৎসার জন্য এখনও প্রস্তত হয়নি ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার (১১ জুন) স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে সভা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের গত ৪ জুন, ৬ জুন ও ৯ জুন এ তিন দিনে চার জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুই জন নারী।
জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেনন-২ হাসপাতালকে করোনার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-এই চারটি প্রতিষ্ঠানে আরটিপিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং চসিকের মেনন-২ হাসপাতালে করানো যাবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
গেলো করোনায় চট্টগ্রামে চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। এটি ছিল চট্টগ্রামের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। গেলোবার এই হাসপাতালে যোগ করা হয়েছিল ২২ জন চিকিৎসককে। তাদের সকলকে বদলির মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে ৪২ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। যেখানে কাঠামো অনুযায়ী থাকার কথা ছিল ১৭৭ জন। এ হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে কেবল একটিমাত্র ভেন্টিলেটর সচল আছে। সেটিও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। তবে হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রূপ দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অচল যন্ত্রপাতি সচল করার কাজ শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় নতুন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষায় কিট সংকট আছে। যেগুলো আছে সেগুলোর মেয়াদ নেই। নতুন করে ৩৬ হাজার কিট-এর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শনিবারের মধ্যে সেগুলো চলে আসবে। এরপর নগরী ও জেলার সরকারি সব হাসপাতালে বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষা হবে। বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘করোনা রোগীর চিকিৎসায় চমেক হাসপাতাল পুরোপুরি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে করোনা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আগের মতো এবারও সফল হতে পারবো। গতবারের অভিজ্ঞতা আমাদের প্রস্তুত করেছে। এখন ডাক্তাররাও বেশি অভিজ্ঞ এবং সাহসী। আমরা জেনারেল হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হিসেবে প্রস্তুত করছি। যাতে প্রয়োজনে দ্রুত সেবা দেওয়া যায়। চমেক হাসপাতালে ও রয়েছে পৃথক কোভিড সেকশন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি সার্ভিস সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে নাগরিকরা ফোন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার ক্ষেত্রে সচেতনতা সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধুতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ছোঁয়াচে এই ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের আগেই প্রস্তুত থাকতে হবে। গতবারের মতো অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে মাস্ক, টিকা ও মেডিক্যালসামগ্রী নিয়ে নয়ছয় করতে না পারে সেজন্য নিয়মিত বাজার তদারকি করা হবে।’