গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম সিঙ্গা। বিল অধ্যুষিত এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কৃষক পরিবারগুলো এসময়ে বোরো ধানের আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে। তাদের ধ্যান-জ্ঞান সবই এই জমি, আর জমির ফসল। তবে, গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ কেউ ছোট-খাটো ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। তারা পহেলা বৈশাখে হালখাতার আয়োজন করে থাকেন, ভিন্ন দিনে ভিন্ন আমেজে।
এই গ্রামের লোকেরা নববর্ষ পালন করেন সরকারিভাবে উদযাপনের পরের দিন, অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল। এদিন সিঙ্গা গ্রামের যারা ব্যবসায় জড়িত, তারা সকালে উঠে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পূজা-অর্চনা করেন। খোলেন নতুন বছরের হিসাবের খাতা। এদিন হাল-খাতার অনুষ্ঠানও করেন। ক্রেতাদের মিষ্টি মুখ করিয়ে থাকেন।
সিঙ্গা গ্রামের পঙ্কজ মণ্ডল জানান, তিনি বছরের বেশিরভাগ সময় পান্তা খেয়ে কাজে বেরিয়ে পড়েন। বাংলা নববর্ষ আলাদা দিনের মতো পালন করা হয় না। তবে, তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে তিনি পঞ্জিকামতে সরকারি পহেলা বৈশাখ পালনের পরের দিন দোকানে হালখাতা অনুষ্ঠান করবেন। সকালে উঠে দোকানে পূজা-অর্চনা করবেন। যারা তার দোকানে কেনা-কাটা করেন, এদিন তারাও আসবেন। বাকি-বাট্টা যা আছে, তারা তা পরিশোধ করবেন। নতুন হিসাবের খাতা খুলবেন। দোকানে আসা লোকজনকে মিষ্টি মুখ করাবেন। এভাবেই সারাদিন কেটে যাবে। এটি তার কাছে নববর্ষ পালন।
একই গ্রামের বৈদ্যনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘পঞ্জিকামতে, বাংলা নববর্ষের দিনে আমাদের এলাকায় অনেক পরিবার সকালে উঠে নিজেদের বানানো টকদই মুড়ি বা খইয়ের সঙ্গে খেয়ে সকালের নান্তা সারেন। কেউ কেউ এসময়ের ফল তরমুজ-বাংগিও খাবারের তালিকায় রাখেন।
এ গ্রামে না হলেও জেলার সদর উপজেলার বারখাদিয়া, কাশিয়ানী উপজেলার পুইশুর, মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়, দাশেরহাট, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার লেবুতলায় এবং কোটালীপাড়া উপজেলার সিদ্ধান্ত বাড়িতে মেলা বসে। তবে, এসব মেলা সরকারি নববর্ষের পরের দিন অর্থাৎ পঞ্জিকামতেই হয়ে থাকে। এসব গ্রামীণ মেলায় বাঁশ-বেত, মাটি দিয়ে তৈরি নানা তৈজসপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের দোকান বসে।