X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে কবিরাজের ফুঁ!

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
১০ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৩৩আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৩০

কাঠুরিয়া কবিরাজের ফুঁ নিতে মানুষের ভিড় কবিরাজ ফুঁ দিলে রোগমুক্তি মিলবে এমন বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা এখনও এ দেশে হাজারে হাজার। এমন একটি ঘটনা ঘটে শনিবার (৯ নভেম্বর)। পুরো দেশ যখন ‘বুলবুল’ ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলা এবং এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত, তখন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সুখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের এক মাঠে বোতল হাতে জড়ো হয়েছিলেন হাজার-হাজার মানুষ; একটি মাত্র ফুঁ’র আশায়। গ্রামে গ্রামে রটে যাওয়া সর্বরোগের ‘উপশমদাতা’ কথিত এক কবিরাজ ফুঁ দেবেন আর সেই ফুঁ এসে পড়বে তার হাত থাকা বোতলের পানি বা তেলে এবং সেই পানি পান করলে বা তেল মালিশ করলে রোগব্যাধি দূর হয়ে যাবে এই বিশ্বাস নিয়ে এসেছিলেন এসব মানুষ। এত লোক জড়ো হওয়ায় সবার মনের আশা পূরণের জন্য সেখানে উপস্থিত কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেন। সাধারণ মানুষ সেই ফুঁতে সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফেরে! সে সময় সেই ‘কবিরাজের’ সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু ও সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটুও। হাস্যকর এই ঘটনার পর নানা সমালোচনা হচ্ছে ওই এলাকা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

স্থানীয়রা জানান,মাইকে ফুঁ দেওয়া এই কবিরাজকে এলাকার সবাই ‘কাঠুরিয়া কবিরাজ’ হিসেবে চেনেন। তার প্রকৃত নাম সবুজ মিয়া। বাড়ি ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পায়লাবের গ্রামে। সপ্তাহে চারদিন কাঠ কাটেন আর তিন দিন কবিরাজি করেন।

তবে চেষ্টা করেও এই কবিরাজের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা জানান, শনিবার ভোর থেকেই সেই মাঠে জড়ো হন নারী-পুরুষেরা। তারা তেল ও পানির বোতল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু ও সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু একই মঞ্চে ‘কবিরাজে’র সঙ্গে ওঠেন। উপস্থিত হাজার-হাজার নারী-পুরুষের উদ্দেশে মাইকে কাঠুরিয়া কবিরাজ বক্তব্য দেন এবং ধৈর্য ধরতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, ‘আমি মাইকে ফুঁ দেবো। মাইকে আমার ফুঁয়ের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতল কাজ করবে। কেউ ধৈর্য হারাবেন না।’ সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হাজার-হাজার নারী-পুরুষ তেল-পানির বোতল মাথার ওপর তুলে ধরেন। কাঠুরিয়া কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেন। ফুঁ দেওয়া শেষ, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায় মাঠ।

এ ঘটনা জানার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়। মাছুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগাতে পারলে সব সম্ভব। আধুনিক যুগের মানুষ হয়েও মানুষগুলো এখনও সেই আগের কুসংস্কারের যুগেই ফিরে গেলো।’

ফেসবুকের একটি গ্রুপে আলহাজিন মাহমুদ বাবু নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘যেকোনও ধরনের অসুখ হোক, কবিরাজের ফুঁ দেওয়া পানি পান করলেই ভালো হয়ে যাবে! আর এত মানুষের পানির বোতলে ফুঁ দেওয়াও তো সম্ভব নয়, তাই মাইক দিয়ে ফুঁ দেবে, এজন্য সবাই বোতল উঁচু করে ধরেছে, এটা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব!’

ফরিক জামান নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘২৫ অক্টোবর হোসেনপুর এসআরডি উচ্চবিদ্যালয়ে বাটপার হিসেবে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়েছিল তাকে, এখন আবার পীর হলো কীভাবে? ভেতরে রহস্যের গন্ধ আছে। খুঁজে বের করা উচিত। বাটপারের কাজে প্রশাসন সহায়তা করে কীভাবে? জনমনে প্রশ্ন?’

তবে এই কবিরাজ সেই ব্যক্তি নন জানিয়ে হোসেনপুর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হোসেনপুর থেকে কয়েকদিন আগে এমন একজন কবিরাজকে আটক করা হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে যাকে আটক করা হয়েছিল, তার সঙ্গে এই কবিরাজের কোনও মিল নেই।

সুখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের এক মাঠে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কবিরাজের মাইকে ফুঁ দিয়ে পানি পড়া-তেল পড়া দেওয়ার ঘটনা পুলিশ জানতো কিনা এমন প্রশ্নে পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। জানার পরপরই আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে দ্রুত ফোর্স পাঠানো হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সেদিকে আমাদের নজর থাকবে। তবে কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেওয়ার পরপরই সবাই মাঠ ত্যাগ করেন, কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি।’

সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ কবিরাজের সঙ্গে একই মঞ্চে থাকার কথা স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকার কিছু মানুষের অনুরোধে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তবে কবিরাজ খারাপ কিছু বলেননি। উপজেলা চেয়ারম্যানও আমাকে যেতে বলেছেন।’

তাহলে আপনি এ কবিরাজকে সমর্থন করেন কিনা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি এর আগেও নেই, পিছেও নেই। যেহেতু হাজার-হাজার লোকের সমাগম হয়েছে, তাই সবার অনুরোধে সেখানে গিয়েছিলাম। আয়োজনের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া বিষয়। এমন চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক বা ইসলামিক কোনও ভিত্তি নেই। আধুনিক যুগে এ ধরনের ঘটনা আশ্চর্যজনক। সহজ-সরল মানুষকে বিপথগামী করা হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতায় যারা জড়িত তারাসহ এই ভণ্ডকে আইনের আওতায় নেওয়া উচিত।’

এ প্রসঙ্গে জানতে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনুর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

/এনআই/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজায় যুদ্ধবিরতি: মিসর ও কাতারের সঙ্গে হামাসের আলোচনা
গাজায় যুদ্ধবিরতি: মিসর ও কাতারের সঙ্গে হামাসের আলোচনা
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা