X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫ লাখ টাকায় কাতারের আদলে ৮টি স্টেডিয়াম বানালেন আর্জেন্টিনা সমর্থক

ফরিদপুর প্রতিনিধি
১৯ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০৯আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০৯

দুদিন পরই শুরু হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। সারা বিশ্বের সঙ্গে এক মাসের এই রোমাঞ্চের জন্য অধির আগ্রহে রয়েছেন বাংলাদেশি সমর্থকরাও। ফুটবল উন্মাদনায় কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামের আদলে ফরিদপুরে আটটি স্টেডিয়াম তৈরি করেছেন মাসুদুর রহমান নামে এক আর্জেন্টিনা সমর্থক। স্টেডিয়ামগুলো দেখতে প্রতিদিন মানুষজন ভিড় করছেন।

ফরিদপুর পৌর এলাকার ভাজনডাঙ্গায় টিবি হাসপাতালের পাশে একটি মাঠে এসব স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে। কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের খেলাগুলো যে আট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে, সে আদলে তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামগুলো। 

দীর্ঘ ১০ বছর কাতারে থেকেছেন মাসুদুর রহমান। কাতারে থাকার কারণে বিশ্বকাপের খেলাগুলো যেসব স্টেডিয়ামে হবে, সে স্টেডিয়ামগুলোতে তিনি গিয়েছেন এবং দেখেছেন। সে থেকেই তার চিন্তা গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে একই রকম স্টেডিয়াম তৈরি করবেন।

স্টেডিয়ামগুলো দেখতে প্রতিদিনই মানুষজন ভিড় করছেন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেড় মাস আগে দেশে আসেন এবং নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে নিয়ে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু করেন মাসুদুর রহমান। একইসঙ্গে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২ দলের পতাকা থাকছে মাঠে। খেলা চলাকালীন বড় পর্দায় দেখানো হবে সেসব খেলা। এছাড়া অন্য এলাকা থেকে যারা দেখতে আসবেন তাদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

কাতারে যে আট স্টেডিয়ামে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হলো—আল থোমামা (টুপির মতো আকৃতি), মদিনা খলিফা (পালতোলা নৌকা আকৃতি), নাইন সেভেন ফোর (সমুদ্রের পাড়ে), আল বাইয়াত (দূরে অবস্থিত), আল রাইয়ান (জাহাজের মতো), লুসাইল (বাটির মতো), আল জয়নু (শামুক) ও এডুকেশন সিটি। এর আদলেই ফরিদপুরের স্টেডিয়ামগুলো তৈরি করা হয়েছে। এগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ, বাঁশ, পাঠখড়ি, পিভিসিসহ বিভিন্ন সামগ্রী।

ভাজনডাঙ্গায় টিবি হাসপাতালের পাশে একটি মাঠে এসব স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে

এ বিষয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে স্টেডিয়ামগুলোর নকশা জোগাড় করি। এরপর ভালোভাবে পর্যালোচনা করি। তারপর সিদ্ধান্ত নিই বাংলাদেশে আসবো। মনে হলো নিজে কাতারের মাঠে বিশ্বকাপ খেলা না দেখে এরকম কিছু করি; যাতে দেশের মানুষ সেখানে বসে খেলা দেখবে আর ভাববে কাতারের মাঠে বসেই খেলা দেখছি। দেড় মাস আগে কাতার থেকে দেশে আসি। এরপর বাড়ির পাশে ভাজনডাঙ্গা এলাকায় টিবি হাসপাতালের সামনের মাঠে স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘আমি আর্জেন্টিনা সমর্থক। মেসি আমার প্রিয় খেলোয়াড়। মেসির খেলা সবাই যেন এই ব্যতিক্রমী মাঠে দেখতে পায় সেজন্য আমার এই আয়োজন। কাতারে যে ডিজাইনে আট স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে এখানেও সেই আদলে তৈরি করা হয়েছে। আল থোমামা স্টেডিয়াম কাতারে টুপির আকৃতিতে করা হয়েছে, এখানেও আমি চেষ্টা করেছি সেভাবে তৈরি করতে। নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামটি সমুদ্রের পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে, আমি এখানে একটি পুকুর পাড়ে নির্মাণ করেছি। কোনোটি জাহাজের মতো, কোনোটি বাটির মতো আবার শামুকের মতো করে তৈরি করা হয়েছে। এগুলো তৈরি করতে বাঁশ, কাঠ, পাঠখড়ি ও পিভিসিসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করেছি। এই কর্মযজ্ঞে আমার সঙ্গে ২০-২৫ জন তরুণ রয়েছেন। প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়েছে। এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের খেলাগুলো যে আট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে, সে আদলে তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামগুলো

মাসুদুর রহমান বলেন, ‘নিজের মনের তৃপ্তির জন্যই এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি। এতে আমার প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। স্টেডিয়াম তৈরির পাশাপাশি আরও কিছু আয়োজন রয়েছে। প্রতিটি খেলা এখানে বড় পর্দায় দেখতে পাবেন সবাই। দূর-দূরান্ত থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য মাঠের পাশেই বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা আছে। কাতারে গিয়ে হোটেলে থাকতে হবে। আমার এখানে থাকার জন্য বাসা-বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। এছাড়া মাঠের চার পাশে ৩২ দলের পতাকা উড়ানো থাকবে। কাতারে খেলা দেখতে গিয়ে মানুষ যে ধরনের সুবিধা পাবে ঠিক এখানেও সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া উদ্বোধনী দিনে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। নিজে কাতারে খেলা না দেখে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে সেই আবহ তৈরি করতেই দেশে এসেছি।’

এই উদ্যোগ নিয়েছেন কাতারপ্রবাসী মাসুদুর রহমান

স্টেডিয়ামগুলো তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আলী আরশাদ। তিনি বলেন, ‘মাসুদুর রহমান আমার মামা হন। মামা দেশে এসে এ ধরনের উদ্যোগের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি ও আমার বন্ধুরা মামার সঙ্গে কাজ করি। এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের সঙ্গে থাকতে পেরে ভালো লাগছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা এস এম রুবেল বলেন, ‘এই ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কাতারে গিয়ে নয়, দেশের মাঠে বসেই কাতারে খেলা দেখার স্বপ্নপূরণ হবে। মাসুদুর রহমান নিজে কাতারে খেলা না দেখে আমাদের কথা চিন্তা করে দেশে এসে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অসাধারণ। রাতদিন পরিশ্রম করছেন, অর্থও খরচ করছেন। দেশের মধ্যে এই প্রথম এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন মাসুদুর।’

/এএম/
সম্পর্কিত
মার্টিনেজের অপেক্ষায় ঘুমাতে পারছিল না মাশরাফির দুই সন্তান
ঢাকায় বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক মার্টিনেজ
আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে আলোচনায় আসা সৌদি কোচের পদত্যাগ
সর্বশেষ খবর
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
ব্রাদার্সের জালে মোহামেডানের ৮ গোল, দিয়াবাতের ৫
ব্রাদার্সের জালে মোহামেডানের ৮ গোল, দিয়াবাতের ৫
ইউক্রেনের খারকিভে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ সেনারা
ইউক্রেনের খারকিভে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ সেনারা
প্রবাসীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কোটিপতি, দুই ভাই গ্রেফতার
প্রবাসীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কোটিপতি, দুই ভাই গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া