পুলিশের হাত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এটা অস্বীকার করার কিছুই নেই, তারা দীর্ঘদিন ধরে একটা পরিকল্পনা করে ওই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে। যেখানে আমাদের দুর্বলতা ছিল, সেই দুর্বলতার ফাঁকফোকর দিয়েই এরা বেরিয়ে গেছে। এ দুর্বলতাটা কে তৈরি করেছিল, কারা এজন্য দায়ী, কারা এই সুযোগ-সুবিধা ওভারলুক করেছে কিংবা কার গাফিলতি আছে, সেগুলোর জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদন আমাদের কাছে এখনও পৌঁছেনি। তদন্ত রিপোর্ট এলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো।
কারাগার থেকে আসামি স্থানান্তরের সময় কারা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ৬০তম কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্নকারী প্রশিক্ষণার্থীদের শপথ এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে জঙ্গিরা থাকে। এই জঙ্গিদের নিয়ে আপনারা যেমন উদ্বিগ্ন, আমরাও তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখানেও কারও কোনোরকম গ্যাপ আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আইজি প্রিজনও এই কারাগারে এসে পরিদর্শন করেছেন। তিনি খতিয়ে দেখছেন যে এখানকার কোনও গ্যাপ আছে কিনা বা কোনও গাফিলতি-দুর্বলতা আছে কিনা। এক্ষেত্রেও কারও যদি গাফিলতি দুর্বলতা পাওয়া যায় সে অনুযায়ী আমরা তাদের বিচারের আওতায় আনবো।
প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে প্রথমে খোলা জিপে চড়ে প্যারেড গ্রাউন্ড কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে নবীন কারারক্ষীদের শপথগ্রহণ, মার্চপাস্ট, কুচকাওয়াজ ও আন আর্মড কম্ব্যাট, পিটি ডিসপ্লে উপভোগ করেন তিনি। এসময় ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তা ছাড়াও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, কারাগারে আটক বন্দিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশের শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ৩৮টি কারাগারে ৩৯টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব কারাগারকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কারাগারে বন্দিদের শ্রমে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ বন্দিদের মজুরি হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে। যা বন্দিরা পরিবারের কাছে পাঠাতে পারছেন। কারাবন্দি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মেয়াদি আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আরও কয়েকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিক উৎকর্ষ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে, যা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই শেষ হবে। এছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কারাগার থেকে আসামি স্থানান্তরের সময় অধিকতর সতর্কতা আবলম্বন করবেন। শৃঙ্খলা ও মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন। কারাভ্যন্তরে বিধিবহির্ভূত নিষিদ্ধ দ্রব্য যেন প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে আপনাদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এদিন অনুষ্ঠানে নবীন কারারক্ষীদের মধ্য থেকে বেস্ট ড্রিলে প্রথম নরসিংদী জেলা কারাগারের রনি দেওয়ান, পিটিতে প্রথম খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের মো. রবিউল ইসলাম, বেস্ট ফায়ারে মেহেরপুর জেলা কারাগারের মো. ইমানুর রহমান ও সর্ব বিষয়ে চৌকস ক্যাটাগরিতে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের নবীন কারারক্ষী মিন্টু ঘোষকে কৃতী প্রশিক্ষণার্থীর পুরস্কার দেওয়া হয়।
ছয় মাস মেয়াদি এই প্রশিক্ষণ শুরু হয় এ বছরের ২৯ মে। এই কোর্সে ৩০১ জন নবীন কারারক্ষী অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের (সুরক্ষা সেবা বিভাগের) সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী হোসেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান, কারা উপ-মহাপরিদর্শক একেএম ফজলুল হক, জাহাঙ্গীর কবির, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা, কোর্সটির প্রধান প্রশিক্ষক ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার আমিরুল ইসলাম, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সুপার হালিমা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।