গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হাজী আব্দুর রহিম পাইকারি কাপড়ের মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে লাগা আগুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে মার্কেটের দুই শতাধিক দোকান ও মালামাল পুড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কোনও হতাহতের খবর, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ ও আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
মার্কেটের পাইকারি পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জোবেদা কটেজের ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে মার্কেটে পূর্বপাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসের খবর দেন। দোকানে তার ২০ লাখ টাকার শাড়ি ও লুঙ্গি ছিল। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তিনি দোকান থেকে মালপত্র বের করতে পারেননি।
আরেক পাইকারি দোকান আজিজ হাউজের মালিক আব্দুল আজিজ জানান, তার দোকানে ৬০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। আগুন লাগার পর দোকান থেকে কোনও মালামাল বের করতে পারেননি। কেউই দোকানের মালামাল কেউ বের করতে পারেননি। আগুনে কয়েক কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
হাজী আব্দুর রহিম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী আব্দুল মতিন জানান, প্রায় ২০০ দোকান ও ৩০০ ভিট ভাড়া নিয়ে এই মার্কেটে ছোট-বড় মিলে ৬০০ ব্যবসায়ী ব্যবসা করতেন। শীতের বিভিন্ন ধরনের কাপড়সহ শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, ওড়না ও কম্বলসহ সব দোকান মালামালে পরিপূর্ণ ছিল। সারাদিন টুকটাক কাস্টমার থাকলেও সন্ধ্যার পর মার্কেটে প্রচুর ভিড় হয়। রবিবার রাত ৯টার কিছু সময় পর হঠাৎই মার্কেটের পূর্ব-দক্ষিণ পাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং আশপাশের দোকান গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
মার্কেটের পাইকারি পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রংধনু ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক রমজান আলী জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে মার্কেটে আগুন দেখতে পেয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। মুহূর্তেই আগুন তার দোকানে লেগে যায়। দোকানে থাকা শীতের কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিসসহ কোনও কিছুই বের করে আনতে পারিনি। দোকানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। চোখের সামনে লাখ লাখ টাকার মালামার পুড়ে গেলো, দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।
পাইকারি দোকান আল হাফিজ লুঙ্গি হাউজের মালিক হাফিজুর রহমান জানান, তার দোকানে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মতো লুঙ্গি ছিল। আগুন লাগার পর কিছুই বের করতে পারেননি। কোনও ব্যবসায়ী মালামাল বের করতে পারেননি। একে কয়েক কোটি টাকার মালামাল পুড়ে যাচ্ছে।
মার্কেটের মালিক হামিদুর রহমান জানান, মার্কেটে ছোট-খাট সবমিলে পাঁচ শতাধিক দোকান ছিল। সবগুলো দোকান ও মালপত্র পুড়ে গেছে। উদ্ধারের নামে লুটপাট করা হয়েছে।
কাজী গার্মেন্টসের দোকান মালিক জয়নাল কাজী জানান, তার দোকানে ৮০-৮৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল এবং ক্যাশে ছিল নগদ তিন লাখ ২ হাজার ৮০০ টাকা। সোমবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানে গিয়ে দেখেন তার ক্যাশে থাকা নগদ তিন লাখ টাকা নেই। মালামালও পুড়ে গেছে। সুযোগ বুঝে এক শ্রেণির লোক উদ্ধার করার নামে দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা নিয়ে গেছে।
এসটিএল গার্মেন্টস তৈরি পোশাকের দোকানের মালিক মুক্তার হোসেন জানান, আগুন লাগার পর দোকানের মালিক ও লোকজন কাপড় উদ্ধার করে বাইরে রাখার পর সেখান থেকে ও দোকান থেকে উদ্ধার করার নামে মালপত্র লুটপাট হয়েছে। মালপত্র এছাড়াও এক শ্রেণির লোকেরা দোকানে থাকা নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, হাজী আব্দুর রহিম পাইকারি কাপড়ের মার্কেটে আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ও পরে টঙ্গী থেকে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
মার্কেটের রাস্তা খুব সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টায় রাত সোয়া ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
