নরসিংদীর পলাশে গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জন এবং সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও বিচার দাবি করছেন তারা।
রবিবার (২৫ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে শিক্ষার্থীরা জিনারদি ইউনিয়নের চরনগরদী বাজার এলাকায় নরসিংদী-পলাশ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। সর্বশেষ পাওয়া খবরে এখন পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এর আগে, সকালে বিদ্যালয় ভবনে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা।
এ সময় কমপক্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধান শিক্ষক ব্যতীত সকল শিক্ষক বিক্ষোভে অংশ নেন। প্রধান শিক্ষক আল মামুনের বিরুদ্ধে মোট ১৯টি অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ অনুসারে, প্রধান শিক্ষক ২০১৭ সালে তৎকালীন সাংসদ কামরুল আশরাফ খান পোটন এবং কমিটির লোকদের ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নিয়োগ পান। দায়িত্ব পেয়ে স্কুল ফান্ডের ২০ লাখ টাকা নিয়ে এসেছেন প্রায় শূন্যের কোঠায়। নানাবিধ উন্নয়ন কাজের নামে ভুয়া ভাউচার বানাতেন প্রতিমাসেই। কোচিং বাবদ জোরপূর্বক টাকা আদায় করতেন। টাকা না দিলে টিসি দেওয়ার ভয় দেখানো হতো। এ ছাড়া সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত বাজে আচরণ এবং ইনক্রিমেন্ট ও স্কেল বাড়ানোর নাম করে জোরপূর্বক টাকা হাতিয়েছেন।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিফ হাসান বলেন, ‘নানাবিধ ফিয়ের নামে নিয়মিত আমাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হতো। কোচিং করতে বাধ্য করতেন আমাদের প্রধান শিক্ষক। কোচিং না করলে টিসি দেওয়ার হুমকি দিতেন।’
আশিকুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানলে আমরা শিক্ষা অফিস ঘেরাও করবো। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত একই স্থানে আমাদের অবরোধ চলবে।’
সৈয়দা জান্নাতুন নাইম নামে বিদ্যালয়ের এক ইংরেজির শিক্ষক বলেন, ‘উচ্চতর স্কেলের আবেদনে টাকা ছাড়া সিগনেচার দেন না প্রধান শিক্ষক। গত বছরের নভেম্বরে ৫ জনের কাছ থেকে মোট ২৫০০ টাকা এবং ৯ জন বিএড শিক্ষকের কাছ থেকে স্কেল বাড়ানোর নাম করে চলতি বছর জুন মাসে নিয়েছেন ৩৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া সম্প্রতি ইনক্রিমেন্টের নাম করে ১৬ জন শিক্ষকের কাছ থেকে নিয়েছেন মোট ২৮ হাজার টাকা।
শতদল সেন নামে সাধারণ বিজ্ঞানের শিক্ষক বলেন, ‘ওনি (প্রধান শিক্ষক) নিয়মিত সঠিক সময়ে স্কুলে আসেন না। ইচ্ছেমতো স্কুলে আসেন এবং আবার চলে যান। স্কুলের পড়াশোনার উন্নয়ন এবং ক্লাস নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করেন না।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে কল করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিলন কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছি।’
পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’