দুর্গাপূজার পর পূর্ণিমা তিথিতে ভক্তরা বিনিদ্র থেকে লক্ষ্মীর পূজা করে বলে একে বলা হয় কোজাগরী পূর্ণিমা বা কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা। আশ্বিনী পূর্ণিমা ছাড়াও কেউ কেউ প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর বিশেষ পূজা করে থাকে। কোনও কোনও অঞ্চলে দীপান্বিতা অমাবস্যায় সন্ধ্যাবেলা লক্ষ্মীপূজার রীতি প্রচলিত আছে। সরায়, ঘটে বা মূর্তিতে লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। এই পূজা ব্যক্তিগত বা সর্বজনীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জের শতাধিক স্থানে বসেছে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট। এসব হাটে লক্ষ্মী প্রতিমা কেনাবেচা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জ, পিড়ারবাড়ি, কান্দি, ধারাবাশাইল, শুয়াগ্রাম, চৌধুরীর হাট, ঘাঘর, কলাবাড়ি, রামশীল, জহরেরকান্দি, ওয়াপদারহাট, নৈয়ারবাড়ি, রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, মনোহর মার্কেট, পশ্চিমপাড়, রাজাপুর, কুশলা, লাখিরপাড় ও হিরণ বাজারে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট বসেছে। এই উপজেলার অন্তত ৩০টি স্থানে জমেছে এই হাট।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোটালীপাড়াসহ গোপালগঞ্জ জেলায় অন্তত ১০০টি হাট বসেছে। এসব হাট থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লক্ষ্মী প্রতিমা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
হিরণ বাজারের মৃৎশিল্পী মিলন পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোটালীপাড়া উপজেলার ৩০টি স্থানে শত বছর ধরে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট বসে আসছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এসব হাটে প্রতিমা বিক্রি করেছেন। আমরাও প্রতিমা তৈরি করে এসব হাটে বিক্রি করছি। প্রতিটি হাটে বেচাকেনা ভালো হয়। এই অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে প্রতিটি হাটে প্রচুর প্রতিমা বিক্রি হয়।’
প্রতিমা ক্রেতা সমীর বিশ্বাস ও আনন্দ দাস জানান, প্রত্যেক সনাতন ধর্মাবলম্বীর ঘরে ঘরে লক্ষ্মী দেবীর পূজা হয়। লক্ষ্মী দেবী খুশি হলে ধনসম্পদ ও ফসলে জমিন পূরিপূর্ণ করে দেন। সংসারের অভাব-অনটন দূর হয়। সবাই সন্তান-সন্ততি নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারেন। তাই পূজার জন্য লক্ষ্মী প্রতিমার হাটে প্রচুর প্রতিমা বিক্রি হয়। তারা বংশপরম্পরায় এসব হাট থেকে প্রতিমা কিনে আসছেন। আজও কিনেছেন তারা।
শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যজ্ঞেশ্বর বৈদ্য অনুপ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোটালীপাড়ার ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজার উৎসব হয়। এই পূজাকে ঘিরে চার-পাঁচ দিন আগে থেকে কোটালীপাড়ার প্রায় ৩০টি স্থানে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট বসে। এসব হাটে উৎসবমুখর পরিবেশে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রতিমা কেনেন। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিমার হাটগুলো আরও শত বছর টিকে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’