গত এক সপ্তাহে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার কেজি কাঁকড়াসহ ৮৫ জন জেলেকে আটক করা হয়। তারপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে কাঁকড়া নিধন করছেন জেলেরা। ফলে প্রাকৃতিক এ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু বন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে মহাজন নামধারী একাধিক মহল জেলেদের কাঁকড়া নিধনে বাধ্য করছে।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাঁকড়া নিধন নিষিদ্ধ। ১ জানুয়ারি থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়।
কোস্ট গার্ড পশ্চিমজোনের (মোংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লা আল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৫ জানুয়ারি আটক জেলেদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জব্দ কাঁকড়া সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে।এছাড়া ২৬ জানুয়ারি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাঞ্চির খাল থেকে ৫০ মণ কাঁকড়াসহ ৪১ জেলেকে আটক করে স্মার্ট পেট্রলিং টিম। পরে তাদের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।’
বন সংরক্ষক (খুলনা সার্কেল) আমির হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রফতানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতি বছরের এই সময়ে সুন্দরবন থেকে জেলেদের কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়।’
স্থানীয় জিউধারা এলাকার মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও চাষি শিমুল মিস্ত্রির মতে, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মোহনা বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাঁকড়া ডিম দেওয়ার উদ্দেশে গভীর সাগরের দিকে ছুটতে থাকে। তাছাড়া প্রজনন মৌসুমে সাগরের পানি গরম থাকে এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির লবণাক্ততা বেশি হয়ে থাকে। এসব কারণে নদী ও খাল থেকে কাঁকড়া সাগর মোহনায় ছুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের কেউ ধরতে না পারে সেজন্য কাঁকড়ার অভয়ারণ্য সুন্দরনের মা কাঁকড়া রক্ষায় প্রতিবছর এই নিষেধাজ্ঞা দেয় বন বিভাগ। এছাড়া মা কাঁকড়া যখন ডিম দেয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। ওই মুহূর্তে তারা ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে। তাদের সামনে যেকোনও খাবার দেওয়া হলে তা দ্রুত খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। যার ফলে প্রজনন মৌমুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারেন।’
এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফেরদাউস আসছারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া নিধন পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হবে। পাশাপাশি এ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কাঁকড়ার প্রজননসহ প্রাকৃতিক এ সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরি। এছাড়া চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়ার চাষ ও ব্যাবসা লাভজনক হওয়ায় এর দিকে বেশি ঝুঁকছে ব্যবসায়ীরা।’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে কোনও জেলেকে কাঁকড়া আহরণের জন্য বনবিভাগ অনুমতি দেয়নি। কিছু জেলে বেশি লাভের আশায় এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।’ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে, বন বিভাগ ওইসব জেলেসহ মহাজনদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া বনরক্ষীরা তৎপর থাকায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযানে আটক জেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হয়েছে।’