X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঝালকাঠির মৃৎ শিল্প বিলুপ্তির পথে!

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি
২২ মে ২০১৮, ১২:১৯আপডেট : ২২ মে ২০১৮, ১২:১৯

বাপ দাদার পেশা ধরে রাখার চেষ্টায় কাজ করছেন এ মৃৎ শিল্পি

দিন দিন বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্লাস্টিক সামগ্রী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে বিলুপ্তির পথে রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। দেশের বিভিন্ন স্থানের মত ঝালকাঠিতে মৃৎ শিল্পীদের ঘরে ঘরে হাহাকার নেমে এসেছে। ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। জেলার কুমার পাড়ার বাসিন্দাদের পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন। কুমারপাড়ার চাকা আজ  আর  তেমন ঘোরে না। মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, সরা, বাসন, কলসি, বদনার কদর প্রায় শূন্যের কোটায়। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক মৃৎ শিল্প। এ দেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। কুমার সম্প্রদায়ের হাঁড়ি-পাতিল ও কলসসহ যে কোনও মৃৎ শিল্প তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে এটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস ও খড়। এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল। তখন এ শিল্পের সব মহলেই কদর ছিল। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এ শিল্পের মালামাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো। সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি পাতিলে বোঝাই করা ভার নিয়ে দলে দলে ছুটে চলত প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায়। পাতিল, গামলা, কূপি বাতি, থালা, দূধের পাত্র, ভাঁপাপিঠা তৈরির খাঁজ, গরুর খাবার পাত্র, কুলকি, ধান-চাল রাখার বড় পাত্র, কড়াই, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখি নিয়ে বাড়ি থেকে বাড়ি ঘুরে বেড়াতেন। পণ্যের বিনিময়ে ধান সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় ধান বোঝাই ভার নিয়ে ফিরে আসত বাড়িতে। ওই ধান বিক্রি করে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত। কিন্তু সরকারের পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগিতার অভাবে আজ এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। ঝালকাঠি জেলার মৃৎ শিল্প এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। কুমাররা মাটির তৈরি জিনিস হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু তেমন বেচাকেনা নেই। এখন দিন বদলে গেছে। সবখানেই এখন প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তাই মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।ফলে মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার পরিবারগুলো আর্থিক সষ্কটসহ নানা অভাব অনটনে জড়িত। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দেশের অনেক কিছুর পরির্বতন হলেও পরির্বতন হয়নি মৃৎ শিল্পের। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে ঝালকাঠি জেলার কুমার পরিবারগুলোর নেই কোনও আধুনিক মেশিন ও সরঞ্জাম। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

গ্রামের গৌরাঙ্গচন্দ্র পাল জানান, অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশা আঁকরে ধরে আছে। মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ঢাকনা হাট-বাজারে ভ্যান নৌকা ভারা দিয়ে হাটে আনলেও জিনিস বিক্রি হয় না। এখন তাদের অনেকেরই অবস্থা শোচনীয়।

তিনি আরও জানান, হাঁড়ি-পাতিল ও অন্য সব জিনিসপত্র তৈরির জন্য কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহৃত এটেল মাটি তাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী থেকে সংগ্রহ করা যেত। বর্তমানে নদী ভরাটের কারণে নদী থেকে আর মাটি তোলা যায় না। তাই পাশের গ্রাম থেকে টাকা দিয়ে মাটি কিনে ভ্যানে ও নৌকায় করে আনতে হয়। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মাটির জিনিস তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ব্যবহারযোগ্য করে সেগুলো জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। মৃৎ শিল্পীরা সরকারের কাছে থেকে স্বল্প শর্তে ঋণ সহায়তা পেলে হয়ত এ পেশা চালিয়ে যেতে পারবেন বলে তারা জানান।

 

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক
ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা