পেট্রোল বোমা হামলায় অর্থ যোগানের অভিযোগ থাকা মনোয়ার হোসেন খানকে মাগুরা-১ আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন মামলার আসামি দিয়ে ভোটের বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব হবে না।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ মার্চ মাগুরা-যশোর সড়কের মঘির ঢাল এলাকায় একটি বালুবাহী ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় ৯ শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়। পরে পাঁচজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চার জন পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২২ মার্চ মাগুরা সদর থানার উপ-সহকারি পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুস সালাম বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন খানসহ ২৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ১৬ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক আদালতে ২৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের পর থেকে মনোয়ার হোসেন খান আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘ ৪ বছর বিএনপির রাজনীতিতে মনোয়ার হোসেনের কোনও অংশগ্রহণ না থাকলেও আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯ নভেম্বর মামলার কিছু নথি গোপন করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন তিনি। পরে দলীয় মনোনয়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক ও জাফর আহম্মেদ সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২৬ নভেম্বর তার জামিন বাতিল করেন। জামিন প্রাপ্তি ও পরিবর্তীতে তা বাতিলের খবরে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদ বলেন, ‘তৃণমূলের অবস্থা বুঝে মাগুরা-১ আসনে দল থেকে সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা ছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মনোয়ার হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। পেট্রোল বোমা হামলার আসামি হয়ে মনোয়ার হোসেন কিভাবে নির্বাচন মোকাবেলা করবেন তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।’
সদর থানা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম তুষার বলেন, ‘কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল দলের দুঃসময়ে রাজপথে ও কারাগারে থেকেছেন এমন একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেদিক দিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদ। কিন্তু নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার বাইরে মনোয়ার হোসেন খানকে দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।’
মাগুরা জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বলেন, ‘মনোয়ার হোসেন খান পেট্রোল বোমা হামলা মামলায় ২ নম্বর আসামি। মামলায় তার বিরুদ্ধে পেট্রোল বোমা হামলায় অর্থ যোগানের অভিযোগ রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণত চার্জশিট দাখিলের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের কোনও বিধান নেই। সে ক্ষেত্রে মনোয়ার হোসেন কীভাবে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রসঙ্গত, মাগুরা-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী মনোয়ার হোসেন সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। তবে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে উচ্চ আদালত তার জামিন বাতিল করেন এবং তাকে মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) তিনি হাজির হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে এ মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।