সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। তার পরিবারের আরও দুই সদস্য ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। পরিবারটি ৯ বছরে তিন সদস্যকে হারিয়ে এখন অনেকটাই দিশেহারা। দুর্বৃত্তের হামলায় প্রাণ হারানোর ভয়ে নজরুল ইসলাম ২০১৩ সালে তিন মাসের মতো থানায় রাত কাটিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দুর্বৃত্তের গুলিতেই প্রাণ হারালেন তিনি।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল নজরুল ইসলামের ভাই সিরাজুল ইসলামকে। এরপর ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে নজরুল ইসলামের ভাইপো সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাসেল কবিরকে। সর্বশেষ সোমবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরতলীর কাশেমপুর এলাকা থেকে পুলিশ নজরুলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৩-২০১৪ সালে নাশকতার সময় নজরুল ইসলাম তিন মাস থানায় থাকতো। পরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে তিনি বাড়ি ফিরে যান। তার নিরাপত্তার জন্য সেই সময় পুলিশ তার বাড়ি পাহারা দিতো।
তিনি জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে।
নিহত নজরুল ইসলাম আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আগরদাড়ি ইউনিয়নের কুঁচপুকুর গ্রামের মৃত নেছার উদ্দিনের ছেলে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হওয়ার খবর পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনছুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি জানান, নিহত নজরুল ইসলাম কদমতলা থেকে বাজার করে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে কাসেমপুর স্টোন ব্রিকস্ এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল যোগে এসে দুর্বৃত্তরা তার ওপর দুই রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিস জানান, নিহত আওয়ামী লীগ নেতার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
নিহত নজরুল ইসলামের ছেলে পলাশ হোসেন জানান, স্থানীয় সাবেক মেম্বার তৌহিদুলের সঙ্গে তার বাবার বিরোধ চলছিল। বিরোধের জের ধরে তৌহিদ মেম্বারের লোকজন তার বাবাকে হত্যা করতে পারে বলে জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলমান সংঘাতের মধ্যে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার ভাই সিরাজুল ইসলামকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতের এই হামলার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছিলেন আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। হামলার সময় নজরুল বাড়িতে ছিলেন না। তাকে না পেয়ে তার বড় ভাইকে হত্যা করা হয়। ওই হামলায় আহত কওছার আলী একই গ্রামের আফতাব সরদারের ছেলে। তিনি নজরুল ও সিরাজুলের ভগ্নিপতি।
সাতক্ষীরা সদর থানা সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল রাতে সিরাজুল ইসলামের ছেলে যুবলীগ নেতা রাসেল কবিরকে সাতক্ষীরা রাজারবাগান এলাকায় গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে নিহতের মা আমেনা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পুলিশ রাসেল কবির হত্যার ঘটনায় সদর উপজেলার দক্ষিণ চুপড়িয়া গ্রামের মাহফুজুর রহমানের ছেলে ইয়াকুব আলী (৫৯), একই উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের দিলদার রহমানের ছেলে ইকবাল হোসেন (৪০) ও নারায়ণজোল গ্রামের বাবর আলীর ছেলে ইমাম হোসেনসহ (৩০) পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল।
