স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে আগামী ২৫ জুন। এরপর রাজধানীর সঙ্গে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের দূরত্ব অনেক কমে আসবে। এ কারণে এই বন্দরে ব্যবসায়ীদের চাপ বাড়বে। বন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করে সেই সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা কতটা সুবিধা পাবেন, এ নিয়ে রয়েছে নানান মত।
তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসায়ী সুবিধার্থে তারা মোংলা বন্দরের দিকে ঝুঁকবেন। কিন্তু এখনও অনেকভাবেই তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। আর তা হচ্ছে সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বন্দর জেটির নাব্য সংকট।
আরও পড়ুন: ২ ঘণ্টায় ঢাকায় গিয়ে অফিস করবে ফরিদপুরবাসী
মোংলা বন্দর বার্থ-শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা ও চট্টগাম থেকে যোগাযোগ অনেকটা কমে যাবে। এর ফলে ঢাকার আশপাশে যে শিল্প কারখানা আছে, সেগুলোর পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানি শুরু হবে। এতে এই বন্দরের ব্যস্ততাও বেড়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সেটা হলো, বন্দর জেটিতে নাব্যতা বাড়াতে হবে। বর্তমানে বন্দর জেটিতে ৭ মিটার নাব্যতা আছে। প্রয়োজন সাড়ে ৯ মিটারের নাব্যতা। তাই দ্রুত নাব্যতা ন্যূনতম ৮ মিটারে উন্নীত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনও বিদেশি জাহাজ মালিক যখন এই বন্দরে জাহাজ পাঠান, তখন লাভ-লোকশানের একটা হিসাব তারা করেন। সেক্ষেত্রে এখান থেকে জাহাজে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হবে, তাতে তারা লাভবান হবেন না। অনাগ্রহ প্রকাশ করবেন। তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মোংলা বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হবে, তার জন্য নাব্যতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।’
আরও পড়ুন : কম দামে দোকান বিক্রি করে দিচ্ছেন বাংলাবাজারের হোটেল ব্যবসায়ীরা
আরেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোস্তফা জেসান ভুট্টো বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর এ অঞ্চলে যে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সরকারের ওপর মহলে দৃষ্টি রেখে বলবো, প্রথমতো ফরিপুরের ভাঙ্গা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত দুই লেনের রাস্তা আছে। ব্যবসায়ীরা যখন এই বন্দরে ছুটে আসবেন, তখনই সড়কে এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। দ্রুত এটাকে ছয় লেনে উন্নীত করতে হবে। কারণ পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কে গাড়ির চাপ বাড়বে। তাই টেকসই রোড ক্যাপাসিটি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এখানে ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য এখানে দ্রুত একটি পাঁচতারা মানের হোটেল করতে হবে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের এসব দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলছেন, সবকিছুই যথা সময়ের মধ্যে করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এই বন্দরে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরেকটা বড় প্রকল্প-মহাসড়কে ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ বাস্তবায়ন চলছে। বন্দরের আউটার বার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। ইনারবার ড্রেজিংয়ের (জেটি থেকে পশুর নদী) কাজও শুরু হয়েছে। বন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এর সুফল পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কোনও প্রকল্পই পিছিয়ে নেই। সবকিছুই ঠিক সময়ের মধ্যে করা হবে।’
আরও খবর—
আগে দুই দিন লাগতো, এখন দিনে গিয়ে দিনেই ফিরবো