সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ঘরে আগুন দিয়ে আব্দুল কাদের ও তার স্ত্রী শারমিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. সবুজ হোসেনকে (২৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব। রবিবার (২০ আগস্ট) ঝিনাইদহের মহেশপুরের মাটিলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (২১ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৬ এর পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফিরোজ কবির।
সবুজ যশোরের শার্শা উপজেলার পোড়াবাড়ির আবদুল বারিক মণ্ডলের ছেলে।
র্যাব জানায়, হত্যা ঘটনার পর সবুজ ভারত চলে যায়। ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বনগ্রাম থানার কমলাপুর গ্রামে তার এক সহকারী শাহজাহান মণ্ডলের আশ্রয়ে অবস্থান করে সে।
মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সবুজ একজন চোরাকারবারী। সে ভারত সীমান্ত দিয়ে মাদক, গরু এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পাচারের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে বেনাপোল পোট থানায় হেরোইন পাচারের মামলা রয়েছে। ওই মামলায় সে ১৭ মাস হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক ছিল। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতরি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, কলারোয়ার চন্দনপুরের সুফিয়া খাতুনের (২৩) সঙ্গে চার বছর আগে সবুজের বিয়ে হয়। সবুজ আগে থেকেই গরু চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে বিয়ের পর থেকেই সুফিয়াকে মারধর করতো সে। এতে গত মার্চে ভাই আব্দুল কাদেরের বাড়িতে চলে আসেন সুফিয়া। বোনকে আশ্রয় দেওয়া এবং অত্যাচারে বাঁধা দেওয়ায় আব্দুল কাদেরকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দিতো সবুজ।
গত ২৮ মে মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য আব্দুল কাদের বাসা থেকে যশোর যান সুফিয়া। ওই দিন রাত পৌনে ৩টার দিকে মামাত ভাই মো. সোহাগ আলমসহ (২২) অজ্ঞাত তিন-চার জনকে নিয়ে আব্দুল কাদেরের ঘরে আগুর ধরিয়ে দেয় সবুজ। পেট্রোল ঢেলে ঘরে আগুন দিয়ে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে দেয় সে। আব্দুল কাদের ও শারমিনের ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। পরে জানালা ভেঙে আব্দুল কাদের, শারমিন এবং তাদের মেয়ে ফাতিমা খাতুনকে (৫) দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গুরুতর অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে রেফার্ড করেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলারোয়া থানায় একটি মামলা করেন সুফিয়া।
পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জুন আব্দুল কাদের এবং ১৪ জুন শারমিন খাতুন মারা যান।