সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষবারের মতো বাবার লাশ দেখার আকুতি জানিয়েও দেখতে পারলো না সন্তানরা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অনুমতি না পাওয়ায় বাবার লাশ না দেখে অশ্রুচোখে বাড়ি ফিরতে হলো তাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়ক সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন দফাদার বুধবার বিকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীনতার পর এক মেয়ে ও দুই ছেলে বিবাহবন্ধনের কারণে ভারতের নদীয়ার কৃষ্ণনগর গ্রামে বসবাস করছে। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে অপেক্ষা করতে থাকে সন্তানরা। এ অবস্থায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে চিঠি দিলেও মেলেনি অনুমতি। শেষ পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যায় তিন সন্তান।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর ভারতে থেকে যায় রবীন দফাদারের মেয়ে ও দুই ছেলে। তবে বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়ায় বসবাস করছেন। রবীন দফাদার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেন। তার মৃত্যুর খবরে ছুটে আসেন ওপারের সন্তানরা। এ অবস্থায় এপারের স্বজনরা শূন্যরেখায় লাশ দেখানোর জন্য বিজিবিকে অনুরোধ জানান। লাশ এনে রাখা হয় মুজিবনগর সীমান্তের স্বাধীনতা সড়কের ১০৫ নম্বর পিলারের কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএসএফ লাশ দেখার অনুমতি দেয়নি। এতে কান্নায় বুক ভেঙেছে দুই দেশের স্বজনদের।
রবীন দফাদারের ছেলে মাইকেল দফাদার বলেন, বাবার লাশ দেখতে পেলে কিছুটা হলেও নিজেদের মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতো ভারতে থাকা আমার ভাইবোন। আমরা বিএসএফকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু অনুরোধ রাখেনি তারা।
সীমান্ত গ্রামগুলোতে বসবাসকারীরা বলছেন, এমন ঘটনা এবারই প্রথম। এর আগে সীমান্তের শূন্যরেখায় দুই দেশের স্বজনদের লাশ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার আকুতি জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।
বিজিবির পত্রবাহক শ্যামল মন্ডল বলেন, সকালে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে একটি চিঠি আমার মাধ্যমে দেওয়া হয়। চিঠিটা হৃদয়পুর বিএসএফ ক্যাম্পে দিয়ে আসি। চিঠিতে শেষবারের মতো বাবার লাশ সীমান্তের শূন্যরেখায় দেখানোর জন্য বিএসএফকে অনুরোধ করা হয়। দুপুরে বিএসএফ আমাদের জানায়, অনুমতি না পাওয়ায় লাশ দেখানো সম্ভব হচ্ছে না।
ভবেরপাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য দিলীপ মন্ডল বলেন, মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার ভারতের হৃদয়পুর বিএসএফের সঙ্গে সাধ্যমতো যোগাযোগ করেছেন, ছেলেমেয়েকে তার বাবার লাশ দেখানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিএসএফ অনুমতি না দেওয়ায় আশাহত হয়েছি আমরা। বিকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন দফাদারকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে আক্ষেপ রয়ে গেছে তার পরিবারের।
মুজিবনগর বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার মনমোহন সরকার বলেন, সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের লোকজন ক্যাম্পে এসে জানান তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের নদীয়া জেলায় বসবাস করে। বিএসএফকে বলে বাবার লাশ শেষবারের মতো দেখোনার ব্যবস্থা করতে বলা হয় আমাদের। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আবেদন পাঠাই হৃদয়পুর বিএসএফ ক্যাম্পে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্ষন্ত লাশ সীমান্তের শূন্যরেখায় নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন স্বজনরা। দুপুর ২টার দিকে বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুমতি না পাওয়ায় লাশ দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই সীমান্তে এর আগে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে লাশ দেখোনোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল স্বজনদের। এবারও আমরা আশা করছিলাম, একটা ব্যবস্থা হবে। কিন্তু এবার কেন বিএসএফ অনুমতি দেয়নি, তা আমাদের জানা নেই।