সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপহার দেওয়া প্রতিমার সোনার মুকুটটি চুরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৪৭ থেকে ২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই চুরির ঘটনা ঘটে। মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, এক যুবক মুকুটটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখনও তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পূজা দেন। পরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে মা কালীর প্রতিমায় সোনার মুকুটটি পরিয়ে দেন। এটি চুরির খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার দুপুরে পূজা শেষে পুরোহিত দিলীপ কুমার ব্যানার্জি মন্দিরের সেবায়েত রেখা রানি সরকারের কাছে চাবি দিয়ে বাড়ি চলে যান। এ সময় মন্দির প্রাঙ্গণে রেখা সরকারসহ ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর মা কালী প্রতিমার সোনার মুকুটটি চুরির ঘটনা ঘটে।
মন্দিরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ২৪-২৫ বছরের এক যুবক দুপুর ২টা ৪৯ মিনিটে মন্দিরে প্রবেশ করেন। স্বাভাবিকভাবে মন্দিরে ঢুকে কালী প্রতিমার পেছনে দাঁড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে মুকুটটি খুলে নিয়ে টি-শার্টের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেন। জিন্সের প্যান্ট ও সাদা টি-শার্ট পরিহিত ওই যুবক মুকুট খুলে নেওয়ার আগে আশপাশে কেউ রয়েছেন কিনা, পর্যবেক্ষণ করলেও কোনও রকম বিচলিত মনে হয়নি তাকে। পুরো ঘটনা ১০-১২ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটেছে বলে ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যায়। মন্দিরে ঢুকে মুকুট নেওয়া যুবককে বেশ প্রশিক্ষিত ও পরিকল্পনামাফিক কাজটি করেছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, মা কালীর ৫১ পীঠের এক পীঠকে কেন্দ্র করে শ্যামনগর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে ঈশ্বরীপুর গ্রামে গড়ে ওঠে শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। বছরের পর বছর ধরে সনাতন ধর্মের লোকজন মন্দিরে থাকা মা কালীর দর্শনসহ পূজা দিতে আসছেন। এটি ঐতিহাসিক মন্দির।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়ি চলে যান পুরোহিত দিলীপ কুমার ব্যানার্জি। দুপুর আড়াইটার দিকে মন্দিরের সেবায়েত রেখা রানি পূজার কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিষ্কারের জন্য মন্দিরের তালা খুলেছেন।
পুরোহিত দিলীপ কুমার ব্যানার্জি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুপুর ২টার কয়েক মিনিট আগে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়িতে যাই। এ সময় সেবায়েত রেখা রানিকে চাবি দিয়ে ভেতরের সরঞ্জামাদি পরিষ্কারের নির্দেশনা দিই। বাড়িতে যাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট পরে দর্শনার্থীদের একজনের মাধ্যমে মুকুট চুরির খবর পাই।’
সেবায়েত রেখা রানি সরকার বলেন, মূল গেটের তালা খুলে মন্দিরের পাশের টিউবওয়েলে পূজার বাসনপত্র ধুতে রেখে আসি। বাকি জিনিসপত্রের জন্য দুই-তিন মিনিট পরে ফিরে এসে দেখি প্রতিমার মাথার মুকুটটি নেই। বিষয়টি জেনে সঙ্গে সঙ্গে আমি মন্দিরে উপস্থিত সবাইকে জানাই।
এ ঘটনার জন্য স্থানীয়রা পুরোহিতের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করছেন। ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন মন্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুরির বিষয়টি বিকাল ৩টার আগে সবাই জানলেও পুরোহিত আরও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বিষয়টি গোপন রেখেছেন। এমনকি শুরুতে ভিডিও ফুটেজ দেখাতেও আপত্তি করেন। ঘটনার পরই ভিডিও ফুটেজ দেখালে হয়তো চোরকে ধরা সহজ হতো।’
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিসিটিভি ক্যামেরায় এক যুবককে শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে আটক ও স্বর্ণের মুকুট উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। চুরির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর কালিগঞ্জ-শ্যামনগরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।