মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় টানা চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালত তিন চিকিৎসকের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এর আগে বরিবার এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম দিনে তিন জন, দ্বিতীয় দিনে তিন জন, তৃতীয় দিনে ১০ জন ও চতুর্থ দিনে তিন জন মিলে চার দিনে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ হলো। বুধবার মেডিক্যাল এক্সপার্ট (বিশেষজ্ঞ) তিন চিকিৎসককে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য হাজির করা হয়েছিল। তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী ৪ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আশা করছি, আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে এ মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে।’
গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে বাদীর এজাহারে কিছু অমিল রয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছিল ৫ মার্চ দিবাগত রাতে এবং শিশুটির বোনের স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর তার বাবা শিশুটিকে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে ৬ মার্চ সকালে শিশুটির বোনের কক্ষে। এ সময় শিশুটির বোন ওই বাড়ির মধ্যেই ছিলেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ১ মার্চ শিশুটি নিজ বাড়ি থেকে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হেলিকপ্টারে মরদেহ মাগুরায় আনা হয়। জানাজার পর উত্তেজিত জনতা শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় চার জনকে আসামি করা হয়। বর্তমানে কারাগারে রয়েছে তারা সবাই।