X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

উপবৃত্তির কথা বলে ১৩ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর কাছ থেকে টাকা নিলেন প্রধান শিক্ষক

আতাউর রহমান, ময়মনসিংহ
২৫ জুন ২০২১, ১০:০০আপডেট : ২৫ জুন ২০২১, ১০:২৫

‘প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন আবেদনের জন্য সবাইকে অফিস খরচ বাবদ একসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। টাকা না দিলে উপবৃত্তি পাওয়া যাবে না। পরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের স্যারের রকেট অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিয়ে দিই। এখন শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমাদের ১৩ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর নাম উপবৃত্তির তালিকায় নেই। স্যারকে টাকা দিলেও শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেননি। আমরা উপবৃত্তি বঞ্চিত হলাম।’

এভাবেই কথাগুলো বলেছে ময়মনসিংহ অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনের এসএসসি পরীক্ষার্থী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জাকারিয়া মাসুম। জাকারিয়া জানায়, উপবৃত্তি পেতে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির ১৩ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০-৫০০ টাকা হারে তুলে পাঁচ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আমিনুল করিমকে দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে এবং অফিস খরচ বাবদ এই টাকা তাকে দিতে হবে।

ইনস্টিটিউশনের অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়। করোনার কারণে তিনবার আবেদনের তারিখ পরিবর্তন হয়। এরই মধ্যে অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করা ১৩ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

তখন আবেদন খরচ বাবদ প্রধান শিক্ষক ১৩ শিক্ষার্থীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে টাকা তুলে জাকারিয়া মাসুম প্রধান শিক্ষকের রকেট অ্যাকাউন্টে দেয়। সেই সঙ্গে টাকা জমা দেওয়ার মেসেজের স্ক্রিনশট রেখে দেয় সে।

জাকারিয়ার ভাষ্য, আমাদের জীবন আট-দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো নয়। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে লেখাপড়া করতে হয়। বিশেষ করে ব্রেইল পদ্ধতির বইসহ শিক্ষা উপকরণ প্রিন্ট করতে হয়। অনেক টাকা খরচ হয়। উপবৃত্তির টাকা পেলে লেখাপড়ায় অনেক উপকার হতো। উপবৃত্তির আওতায় আমরা সবাই যাতে আসতে পারি, এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সপ্তম শ্রেণির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইমুল হাসান জানায়, বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষককে দিলাম। বৃত্তি পেলে কিছু টাকা পরিবারে এবং বাকিটা নিজের কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু আমাদের টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষক মেরে দেবেন, ভাবতেই পারিনি।

১৩ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর নাম উপবৃত্তির তালিকায় নেই

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আমিনুল করিম বলেন, পাঁচ হাজার নয়, আবেদন অনলাইনে জমা দেওয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিয়েছিলাম। করোনার কারণে সময়মতো আবেদন জমা দিলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই ১৩ জনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অনুরোধ করেছি।

আপনার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা পাঠানোর মেসেজের স্ক্রিনশট জাকারিয়ার কাছে রয়েছে জানালে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক আজহারুল হক বলেন, উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের টাকা নেওয়ার বিষয়টি অমানবিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, এই শিক্ষাবৃত্তির আওতায় বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা, দশম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চার হাজার টাকা পাবে।

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ বিএনপি নেতা গ্রেফতার
কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ বিএনপি নেতা গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল