মরিয়ম বেগম। বয়স ত্রিশ। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের মনছুর আলী হাজীপাড়া এলাকার রিকশাচালক মিজানের স্ত্রী তিনি। কোনওরকমের সংসার মরিয়মের। যেন নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। প্রতিদিন স্বামী রিকশা চালিয়ে যা পেতেন তাই দিয়ে সংসার চলতো। দুঃখ কষ্টে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে গেলেও সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুঃখের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বাঙালির তথা মানুষের শক্তি যে অসীম, বিপন্নতাকে বাদ দিয়ে নয় বরং সঙ্গে নিয়েই তারা বাঁচতে পারেন, এর দৃষ্টান্ত রাখলো দরিদ্র পরিবারটি, আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া নবজাতক সন্তানের নাম রোয়ানু রাখার মধ্য দিয়ে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব মরিয়ম বেগম স্বামীর সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। গত বছর বর্ষা মৌসুমের কথা, তার স্বামী মিজান তখন দিনমজুর। তাদের পৈত্রিক কুড়েঘরটি জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়েছিল। পরে অনেক কষ্টে স্বামী-স্ত্রী মিলে আবার মাথা গোঁজার জন্য নতুন একটি কুড়েঘর তৈরি করেছিলেন। ওই ঘরটিও ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উড়িয়ে নিয়ে যায় চোখের সামনে। পরে কোনও উপায় না দেখে ওই উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আফাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় পরিবারটি। ওখানেই ২২মে ভোর ৫টার দিকে একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেন মরিয়ম। মরিয়মের মা শিশুটির নাম রাখেন জান্নাত আরা রোয়ানু। এখন ঘরবাড়ি জোয়ারের পানির স্রোতে ভেসে গেলেও সন্তান কোলে আসায় হারানোর বেদনা ভুলে গেছেন বলে জানান মরিয়ম বেগম।
মরিয়মের মা ফাতেমা বেগম জানান, মরিয়মের দু’বছর বয়সী আরও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। নবজাতক মেয়ে সন্তান হওয়ায় স্বামী মিজানুর রহমানের পরিবারের লোকজন কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও তিনি ভীষণ আনন্দিত। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা তার মেয়ে মরিয়ম বেগম ও নাতনি নবজাতক শিশু রোয়ানু শারীরিকভাবে সুস্থ। স্থানীয় একটি ফার্মেসী থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর মা মেয়ে ভালো আছেন। প্রতিদিন নাতনিকে দেখতে যান তিনি। দেখেন, তার ফুটফুটে নাতনি রোয়ানু মায়ের কোলে খেলা করছে।
মরিয়ম বেগমের স্বামী রিকশাচালক মিজানুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তার একমাত্র সম্পত্তি কুড়েঘরটি। ওই দিন জোয়ারের পানিতে চোখের সামনে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলেও করার কিছু ছিলো না তার। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে তিনি ও তার গর্ভবতী স্ত্রী আশ্রয় নেন আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেই জন্ম নেয় মেয়ে রোয়ানু। শাশুড়ি পছন্দ করে নাতনির নাম রোয়ানু রেখেছেন। এতে তিনিও খুশি।
/এইচকে/