নাটোরের খ্রিস্টান মুদি দোকানি সুনীলকে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক সবুজকে মামলার সূত্র ধরে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার বিকেলে রিমান্ড আবেদনসহ কোর্টে চালান দিয়েছে ডিবি পুলিশ। অপরদিকে তদন্ত তদারকি করার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী।
ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশকে সহায়তার জন্য ঢাকা থেকে দুই সদস্যের বিশেষ ব্রাঞ্চ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। সুনীল হত্যাকাণ্ডের পর এলাকার মানুষদের নিরাপত্তার স্বার্থে খ্রিস্টান পল্লীতে র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি (তদন্ত) এমরান হোসেন জানান, নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়না তদন্তের পর রবিবার রাতেই লাশটি পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই রাতে নিহতের মেয়ে স্বপ্না গোমেজ বাদী হয়ে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
ডিবি পুলিশের দাবি এটি একটি ক্লুলেস (সূত্রবিহীন) কেস এবং তারা বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও নিহতের মেয়ে স্বপ্না গোমেজ সূত্রে জানা যায়, বনপাড়া বাজারের মফিজ কসাইয়ের মেয়ে তার বাড়ির ভাড়াটিয়া মনির সঙ্গে তার বাবার শত্রুতা ছিল।
স্বপ্না জানান, মনির স্বামী ঢাকায় বাস করেন। মাসের প্রায় ১পাঁচ দিন স্বামীর কাছে থেকে অবশিষ্ট দিন সুনীলের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন এই নারী। প্রায় ৩-৪ মাস আগে পানির সংযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ে মনির সঙ্গে তার বাবার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মনি তার বাবা ও ভাইকে ডেকে আনে। মনির বাবা মফিজ কসাই এক পর্যায়ে মনির সঙ্গে কথা কাটাকাটির ঘটনায় তার বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে এবং হুমকি দিয়ে চলে যায়।
নাটোর ডিবি ওসি, মামলার আইও আব্দুল হাই জানান, তিনি ইতোমধ্যেই মনির সঙ্গে সুনীলের ঘটনাটি জেনেছেন। সোমবার বিকেলে তিনি পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদনসহ সবুজকে নাটোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আল আমিনের আদালতে হাজির করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, এটা একটা ক্লুলেস হত্যা মামলা। তার পরও তিনি বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইন্সপেক্টর ফরিদ একজন উপ-পরিদর্শকসহ ঘটনাস্থলে তদন্তকাজে সহায়তার জন্য পৌঁছেছেন।
তিনি আরও জানান, ‘সবুজের কাছ থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি, আবার মনির বিষয়টিও জেনেছি। আমরা তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি আর নিজেদের চিন্তাগুলো মাথায় রেখেও তদন্ত করছি। আশা করি, খুব শিগগিরই সুনীল হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারবো।’
নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী জানান, তদন্তকাজ তদারকি করার জন্য এএসপি মুনশি শাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।
বনপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি এবং জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মণ্ডলীর সভাপতি ধীরেন সাহা দাবি করেন, সুনীল হত্যার ঘটনার পর থেকেই খ্রিস্টান পল্লীর অধিবাসীরা ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত রয়েছেন।
বড়াইগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি সার্কেল) শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকে খ্রিস্টান পল্লীতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। খ্রিস্টানপল্লীর অধিবাসীদের ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বনপাড়া গির্জার পাশে সমাহিত করা হয়েছে। সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাকে সমাহিত করা হয়। নিহত সুনীলের একমাত্র মেয়ে স্বপ্না গোমেজ জানান, সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসরণ করে বনপাড়া গির্জার পাশেই তার বাবাকে সমাহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে নিলয়ের জানাজা সম্পন্ন
/এইচকে/আপ-এআর/