গাজীপুরে টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় শনিবার ভোরে টাম্পাকো ফয়লস লিমিটেড নামের একটি প্যাকেজিং কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ তলা ভবনটি পুরোপুরি ধসে পড়ে। বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ও চাপা পড়ে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ভোর ৬টায় বিস্ফোরণ ঘটলেও বিকাল পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ২৯ টি ইউনিট কাজ করছে।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, সেখানে প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ হয়। প্রতি শিফটে প্রায় দেড় শ শ্রমিক কাজ করেন। বয়লার বিস্ফোরণের সময় পুরোদমে কাজ চলছিল। এ কারণে সেখানে অন্তত দেড় শ’ শ্রমিক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কতজন শ্রমিক বের হতে পেরেছে এবং কতজন ভেতরে আটকা পড়েছে বা দগ্ধ হয়ে হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান জানান, টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ রাখা হয়েছে। এছাড়াও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন অর্ধশত। অন্যদিকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) জরুরি ভিত্তিতে নিয়ে আসা গুরুতর আহত শ্রমিকদের মধ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘ঢামেকে এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ২৪ জন। এদের মধ্যে ৪ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তাদের একজনের শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে।’
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, টাম্পাকোর সিকিউরিটি গার্ড আবদুল হান্নান ও জাহাঙ্গীর, প্রিন্টিং টেকনিশিয়ান রফিকুল ইসলাম, শিফট ইনচার্জ শুভাশীষ চন্দ্র, জেনারেটর অপারেটর আনিসুর রহমান, ক্লিনার শঙ্কর সরকার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সিকিউরিটি গার্ড দেলোয়ার হোসেন (৪৫), মেশিনম্যান আনোয়ার হোসেন (৪০), শ্রমিক অহিদুজ্জামান স্বপন (৩৪) ও অজ্ঞাত এক নারীর। বাকিদের পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি। গাজীপুর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে স্বজনদের ভিড় করতে দেখা গেছে।
এদিকে, দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এসে আহত রোগীদের খোঁজখবর নেন। দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে যান শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি জানান, নিহতদের এক লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। আহতরা পাবেন চিকিৎসার খরচ।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেছেন, ‘সবার চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে। আমাদের জরুরি বিভাগ কাজ করছে, প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসায় এখানকার নার্স ও চিকিৎসকেরা কাজ করছেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, সব করা হবে।’
বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেহানুল ইসলাসকে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা পলাশ মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা ৫ মিনিটের দিকে টঙ্গীর টাম্পাকো প্যাকেজিং কারখানার নিচতলায় বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর কাখানায় আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কারখানাটি পাঁচ তলা। সেখানে রাতের শিফটে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। বিস্ফোরণের পর ভবনটি ধসে পড়ে।'
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া আশেপাশের ভবনগুলোতে আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং আহত-নিহতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছে। ফায়ার সার্ভিসের কাজের সুবিধার্থে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান নিয়ে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিয়েছে।’
/এবি/এআরআর/বিএল/এফএস/টিএন/এআরএল/
আরও পড়ুন:
মালিকের গাফিলতি ছিল, আমরা মামলা করবো: আইজিপি
বাতাসে লাশের পোড়া গন্ধ