X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমার বাচ্চা ছেলেকে এভাবে মারতে পারলো!’

দুলাল আব্দুল্লাহ, রাজশাহী
২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৫৫আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৫৭

স্কুলছাত্র মনিরুল ‘ধরেন, আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেছে। তাই বলে তাকে দোকানের সঙ্গে ঝুলিয়ে তিন ভাই মিলে এভাবে নির্যাতন করবে! তাকে ধরে এনে আমাদের কাছে কিংবা স্থানীয় মুরব্বিদের কাছে তারা নালিশ করতে পারতো।’ মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে বাংলাট্রিবিউনকে এসব বলছিলেন রাজশাহীর বাঘার নির্যাতিত শিশু মনিরুলের মা আবেদা বেগম।

সোমবার মোবাইল চুরি সন্দেহে মনিরুল ইসলাম (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রকে দোকানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধর করে তিন ভাই। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার নারায়ণপুর বাজারের মনিকা সিনেমা হলের সামনে। অভিযুক্ত তিন ভাই হলেন, পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমান, সেনা সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন ও ব্যবসায়ী মহিবুল আলম। জিল্লুর রহমানকে এরই মধ্যে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মনিরুলের মা আবেদা বেগম মামলা করেছেন।

আবেদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। বড় ছেলেও চাকরির জন্য ঢাকায় গেছেন। আর মেজো ছেলে মনিরুল মোবাইল চুরি করবে, আর সে টাকায় সংসার চালাবো- এটা কোনও মা করতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই ছেলেটার লেখাপড়ায় তেমন মন নেই। খালি ঘুরে বেড়ায়। তার মানে এই নয় যে, আমার ছেলে ওই লোকের (জিল্লুর রহমান) মোবাইল চুরি করেছে। অন্যের জিনিসের প্রতি আমার ছেলের লোভ নেই। আর ওরা তো অন্য গ্রামের। তাদের আমি ও আমার ছেলে আগে কখনও দেখিনি। তারা মোবাইল চুরি সন্দেহে আমার বাচ্চা ছেলেকে এভাবে মারতে পারলো!’ 

মঙ্গলবার বিকালে বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বাড়ি ফিরেছে মনিরুল। মোবাইল ফোনে সে বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ব্যাডমিন্টন কোর্ট কাটতে নারায়ণপুর মাছ বাজারে বন্ধু শাওনকে ডাকতে গিয়েছিলাম। ওই সময় বাজারে জিল্লুর রহমানের মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। মোবাইল চোর সন্দেহে তিন ভাই আমাকে মোটরসাইকেলে তুলে মনিকা সিনেমা হলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মোবাইল ও ফ্ল্যাক্সিলোড ব্যবসায়ী আনারুলের দোকানের সামনে ধরে রাখে। এরপর দড়ি দিয়ে আমার দুই পা বেঁধে ফেলে এবং মুখের ওপর কিল-ঘুষি মারে। এরপর একটি বাঁশের টুকরা দিয়ে পেটায়। শেষমেশ পেটায় দোকানের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে।’ মনিরুল জানায়, এ ঘটনার দৃশ্য দাঁড়িয়ে মানুষজন দেখতে থাকে। কিন্তু নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমদিকে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। কিন্তু নির্যাতনের দৃশ্য সইতে না পেরে একত্রিত হয়ে বাজারের লোকজন নির্যাতনকারীদের ধাওয়া করে।

মনিরুল বলে, ‘প্রথমে আমাকে এক হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল নেওয়ার কথা বলেন ওই লোকটি (পুলিশের বহিস্কৃত হাবিলদার হাফিজুর রহমান জিল্লুর)। কিন্তু আমি তাকে বলি, আপনার মোবাইল নেইনি। সে আমার কথা বিশ্বাস করেনি। আমি তাদের বিচার চাই।’   

অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ও মানবাধিকার কর্মী এহসানুল আমিন ইমন বলেন, ‘একটার পর একটা শিশু নির্যাতনের ঘটনার মূল কারণ হলো, অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া। এছাড়া সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে নিজেদের খুব বড় ভাবার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে তারা অন্যায় করতে কোনও দ্বিধা করে না।’

বাঘা থানার ওসি আলী মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এই মামলাটি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছি। অপরাধী যেই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না।’

/এআরএল/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পদ্মশ্রী পাওয়া শিল্পী এখন দিনমজুর!
পদ্মশ্রী পাওয়া শিল্পী এখন দিনমজুর!
সিলেটে এয়ার অ্যাস্ট্রার বিজনেস পার্টনার মিট
সিলেটে এয়ার অ্যাস্ট্রার বিজনেস পার্টনার মিট
ডি মারিয়ার সঙ্গে চুক্তির গুঞ্জনে যা বললেন মায়ামি কোচ
ডি মারিয়ার সঙ্গে চুক্তির গুঞ্জনে যা বললেন মায়ামি কোচ
রাজশাহীতে হাসান আজিজুল হক সাহিত্য উৎসব, পদক পাচ্ছেন ৬ জন
রাজশাহীতে হাসান আজিজুল হক সাহিত্য উৎসব, পদক পাচ্ছেন ৬ জন
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়