আজ ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পিরোজপুরের ঘরে ঘরে উড়েছিল লাল সবুজের বিজয় পতাকা।
১৯৭১ সালের ৪ মে পিরোজপুরে প্রথম পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করে। শহরের প্রবেশদ্বার হুলারহাট নৌ-বন্দর থেকে প্রবেশের পথে প্রথমেই মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। এ দিনই তারা ২৮ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। ৫ মে পাকবাহিনী তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসক আব্দুর রাজ্জাক, মহাকুমা পুলিশ প্রশাসক ফয়জুর রহমান আহমেদ (লেখক হুমায়ুন আহমেদের বাবা) ও ট্রেজারি অফিসার ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমানকে বলেশ্বর নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করে। তারপর আট মাস স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ও রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতা পক্ষের লোকজনদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষকে।
পিরোজপুরকে হানাদার মুক্ত করতে সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (তৎকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন) জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টায় পিরোজপুরের পাড়েরহাট বন্দর দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিবাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা শহরের পূর্বদিকের কচা নদী দিয়ে বরিশালের দিকে পালিয়ে। এর আগে স্বরূপকাঠী পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের গড়ে তোলা দূর্গে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকসেনা নিহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হতে থাকে। ফলে ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর ছেড়ে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়।
পিরোজপুর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার গৌতম চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা পিরোজপুর অঞ্চলে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে। সম্ভ্রম হারান প্রায় ৫ হাজার মা-বোন।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহরের স্বাধীনতা চত্বর থেকে সকালে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে বলেশ্বর নদীর তীরে শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। বিকালে স্বাধীনতা মঞ্চে আলোর মিছিল,আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন:
চাঁদপুর মুক্ত দিবস আজ
/বিটি/