বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর ঘুরে দেখা গেছে দুর্গত এলাকা মানুষ সরকারি ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। ওই এলাকার মানুষ ১৫টাকা কেজি দরে চাল কেনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও চাল পাচ্ছেন না। কারণ চাহিদার তুলানায় সরবরাহ কম থাকায় কিছু ক্ষণের মধ্যেই চাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসময় চাল না পেয়ে তাহিরপুর উপজেলা সদরে আসা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘জমির ধান নিয়ে গেছে ঢলের পানি, হাওরের মাছ নিয়ে গেছে বিষাক্ত পানি আর এ পানি খেয়ে মরছে ঘরের হাঁস। সব সম্বল শেষ। এখন খাব কী? সংসার চালাবো কেমন করে।’
১১টি উপজেলা সদরে সীমিত আকারে খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। যে কারণে গ্রামের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী ত্রাণ সহযোগিতার বাইরে রয়েছেন। অন্য দিকে উপজেলা সদরে থেকে চাল ও আটা কিনতে আসা অনেকেই সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করার পর খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
একই অবস্থার শিকার বদরপুর গ্রামের আমির আলী বলেন,‘সর্বশেষ সম্বল হালের বলদও গো খাদ্যের অভাবে অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছি। সরকার বলছে কাউরে না খেয়ে মরতে দেবে না। কিন্তু সময় মত চাল না পেলে তো বাঁচার আশা দেখি না।’
মধ্যতাহিরপুর গ্রামের নুরুল আমিন বলেন, ডিলারের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে চাল ও আটা বিক্রির উদ্যোগ নিলে সবাই খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসতো।
সাহেবনগর গ্রামের আকিক মিয়া বলেন, হাওর এলাকার মানুষ বছরের ৬ মাস কর্মহীন থাকে। তার উপর এবার ফসল তলিয়ে যাওয়ায় বিকল্প কাজের খোঁজে অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে যাওয়া শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসকের অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখন পর্যন্ত ১০৭০ মেট্রিক টন চালসহ ৫২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
সরকার এখনো তৃণমূল পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেনি উল্লেখ করে বিশ্বম্ভপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ফসল হানির ঘটনায় জেলার হত দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য তৃণমূল থেকে ত্রাণকার্যক্রম শুরু করতে হবে। এছাড়া কৃষকদের কৃষি ঋণ ও এনজিও ঋণের কিস্তি মওকুফ করতে হবে।
তাদের সহযোগিতায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বেরো মওসুমে কৃষকদের সহজ শর্তে কৃষিঋণ ও উপকরণ সহযোগিতা দিতে হবে। তাহলে কৃষকরা তাদের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
ত্রাণের পরিধি ও পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এখন ৩ টন চাল ও ৩ টন আটা খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এখানকার লোকজনের মধ্যে আটার চাহিদা না থাকায় আটা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আটার পরিবর্তে চাল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে খোলা বাজারে চাল বিক্রির কথাও বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। তালিকায় থাকা ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ করে টাকা পাবে। এটি তিনমাস চলবে। এছাড়াও বিশেষ খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো তিনগুণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যাতে আগামী বোরো মওসুম পর্যন্ত চালানোর কথা বলা হয়েছে। মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলেদেরও ভিজিএফ এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে জেলায় কোনও খাদ্য সংকট নেই। কাজেই সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বণ্টনেরর জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছি।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: ফের ময়না তদন্ত রাউধার, মন্তব্য করেনি মেডিক্যাল টিম