X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাভারে প্রসাধনী ব্যবসার আড়ালে বোমা তৈরির কারখানা

রাফসান জানি
২৮ মে ২০১৭, ০৪:৩৪আপডেট : ২৮ মে ২০১৭, ০৬:২৫
image

সাভারে প্রসাধনী ব্যবসার আড়ালে বোমা তৈরির কারখানা

প্রসাধনী ব্যবসার আড়ালে সাভারে চলতো জঙ্গি কর্মকাণ্ড। শুক্রবার রাতে জঙ্গিদের একটি  ‘আস্তানা’ ঘেরাও করে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এ দাবি করেছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, প্রসাধনী ব্যবসার কারখানা তৈরি করলেও এর আড়ালে শক্তিশালী বোমা ও গ্রেনেড তৈরি করতো জঙ্গিরা। যদিও এ অভিযানে কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ।

শনিবার (২৭ মে) জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সাভারের মধ্য গেন্ডা এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) সদস্যরা। অভিযানের পর একটি আস্তানা থেকে ৭টি হাতে তৈরি গ্রেনেড ও ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।

সিটিটিসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাভারের মধ্য গেন্ডা এলাকায় জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর একটি বাড়ি চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করে সিটিটিসি। কিন্তু সেখানে কাউকে না পেয়ে স্থানীয় একজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য আরেকটি বাড়িতে অভিযান চালায় তারা। সেখান থেকে হাতে তৈরি গ্রেনেড, সুইসাইডাল ভেস্টসহ প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। কিন্তু জঙ্গিরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে এরই মধ্যে আরও একটি বাড়ির সন্ধান পায় সিটিটিসি’র সদস্যরা। সেই বাড়িটি প্রসাধনী তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল জঙ্গিরা।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান জানান, জঙ্গিরা ক্রিম জাতীয় প্রসাধনী তৈরি করতো। সেগুলো ভ্রাম্যমাণভাবে বিক্রি করতো। এই ব্যবসার আড়ালে তারা বিস্ফোরক বানানোর কাজ করে আসছিল।

শনিবার সকাল ১০ টা থেকে রাতভর ঘিরে রাখা সৌদি প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে সিটিটিসি’র বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এই বাড়ির পাশে হালিমের বাড়িতে ৩ মাস আগে প্রসাধনী কারখানা গড়ে তোলে জঙ্গিরা। সেখানে কাজ করতো ৬-৭ জন। যাদের মধ্যে ৪ জন থাকতেন কারখানার অদূরে আনোয়ার হোসেন মোল্লার বাড়িতে। কারখানা ও আনোয়ার হোসেন মোল্লার বাড়ি একই সময়ে ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। গত এপ্রিলে আনোয়ার হোসেনের বাড়ি ছেড়ে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা ভাড়া নেয় হাবিবুর রহমানের বাড়ি। আগামী মাসে কারখানাটি ছেড়ে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এর আগেই অভিযান পরিচালনা করে সিটিটিসি।

অভিযানে অংশ নেওয়া সিটিটিসি’র নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ধারণা করা হচ্ছে এই এলাকায় প্রসাধনী কারখানা ও ব্যবসার আড়ালে জঙ্গিরা বড় ধরনের নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল। সেই লক্ষ্যেই হাতে তৈরি বোমা ও বিস্ফোরক তৈরি করছিল তারা।

অভিযান শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান জানান, শুক্রবার আনোয়ার হোসেন মোল্লার বাড়িতে অভিযান চালায় সিটিটিসি’র সদস্যরা। কিন্তু জঙ্গিদের পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় একজনের তথ্যের ভিত্তিতে সৌদি প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বাড়িতে রাত ৮টার দিকে অভিযান চালায় সিটিটিসি। সেখানেও কোনও জঙ্গি পাওয়া যায়নি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা আগেই পালিয়ে যায়। কিন্তু বাড়িতে বিস্ফোরক থাকায় রাতে অভিযান স্থগিত করে শনিবার সকালে ১০টার দিকে বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে বিষ্ফোরক ও বোমা উদ্ধার করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে।

বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের বরাত দিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান বলেন, বাড়িটি থেকে বিয়ারিং বল, ব্যাটারি, সার্কিটের মতো বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো মোবাইল, ল্যাপটপ ও একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।

এছাড়া পাশে হালিমের বাড়িতে কারখানার সন্ধান পেয়ে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রসাধনী, মো. ইব্রাহিম হোসেন নামের একজনের জন্মসনদ, মো. কামাল হুসাইন নামে একজনের চারিত্রিক সনদপত্র, মো. পলাশ হাওলাদার নামের একজনের পরিচয় পত্র ও ছবি পাওয়া গেছে। তবে এদের পরিচয় সঠিক কিনা তা জানাতে পারেননি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জঙ্গিরা সাধারণত ছদ্মনাম ব্যবহার করে। এগুলো সঠিক কিনা তা এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তদন্তের মাধ্যমে এগুলোর ব্যাপারে জানানো হবে।

এই প্রসাধনীর কারখানাতে বিস্ফোরক তৈরি করা হতো বলে ধারণা করছেন সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা। তারা জানান, এই কারখানায় লোক দেখানো প্রসাধনী তৈরি করা হতো। মানুষ যাতে সন্দেহ না করে তাই কারখানা স্থাপন ও ব্যবসার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল তারা। মূলত তারা কারখানার আড়ালে বিস্ফোরক তৈরি করতো।

জঙ্গিরা নাশকতা সৃষ্টি করতে সাভারের গেন্ডা এলাকায় অবস্থান করছিল উল্লেখ করে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ওরা জেএমবির সদস্য। নাশকতার উদ্দেশ্যে এ এলাকায় আস্তানা গড়েছিল তারা। জঙ্গিরা সাধারণত নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে চায়। এখানেও তাই হয়েছে।

শনিবার সকাল ১০টায় রাতভর ঘিরে রাখা হাবিবুর রহমানের বাড়িতে প্রবেশ করে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। বোমা নিষ্ক্রিয় করা কাজ শুরু করেন তারা। এসময় বাড়িটিতে মোট ১০টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বেলা ১২টার দিকে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণ দুপুর ১টা, তৃতীয় বিস্ফোরণ ১টা ১৯ মিনিট, চতুর্থ দফা ১টা ২৫ মিনিট এবং পঞ্চম বিস্ফোরণ হয় ১টা ৩১ মিনিটের দিকে। দশম বিস্ফোরণটি ঘটানো হয় দুপুর সোয়া দুইটায়। পরবর্তীতের অভিযান শেষ হয় বিকেল ৩টায়। অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে অভিযান সম্পর্কে আনু্ষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

/আরজে/টিএন/

আরও পড়ুন:

পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেল সন্দেহভাজন জঙ্গি!

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সৌদি আরবে বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট
সৌদি আরবে বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট
বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ
বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ
মোহামেডানকে রুখে দিলো পুলিশ, চট্টগ্রাম আবাহনী দিলো ৫ গোল
মোহামেডানকে রুখে দিলো পুলিশ, চট্টগ্রাম আবাহনী দিলো ৫ গোল
হিট অফিসারের পরামর্শে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ ছিটাবে ডিএনসিসি
হিট অফিসারের পরামর্শে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ ছিটাবে ডিএনসিসি
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই