অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটায় প্রাণহানি ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করেন বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তরা। প্রতিবছরই বান্দরবানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। তবে বর্ষা আসলে পাহাড় ধস আরও বেড়ে যায় এবং সামান্য বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ে ছোট-বড় অনেক পাহাড়। এতে প্রাণ হাড়ায় শত শত মানুষ।
বান্দরবানের ৪৪৭৯.০১ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে পাহাড়। কিন্তু জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাসস্থান নির্মাণ আর ইমারত তৈরি করতে প্রায়ই কাটা হচ্ছে পাহাড়। এর ফলে বর্ষা এলেই পাহাড়ের কাটা অংশে পানি ঢুকে ধসে পরে এবং মানুষের জান-মালের ক্ষতি হয়।
স্থানীয়দের মতে, প্রতিবছর পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও বর্ষা আসলে প্রশাসন কিছু বৈঠক ও মাইকিং করে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। এখানকার প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা করছে না। দিনের বেলায় পাহাড় কাটছে না। কিন্তু রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে সাবার করা হচ্ছে।
বান্দরবানে প্রতিবছর কি পরিমাণ পাহাড় ধস হচ্ছে, কি পরিমাণ মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে এর সঠিক কোনও তথ্য সরকারি-বেসরকারি কোনও সংস্থার কাছে না থাকলেও বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্র বলছে যেসব এলাকায় পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ভৌত অবকাঠমো নির্মাণ করছে সেসব এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা বাড়ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পাহাড় ধসে ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জেলা সদর, রোয়াংছড়ি, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নারী-শিশুসহ ৭৪ জন নিহত হয় আর আহত হয় ৫ শতাধিকের বেশি মানুষ। সম্প্রতি ১৩ জুন বান্দরবান সদরেই পাহাড় ধসে মৃত্যু হয় শিশুসহ ৯ জনের আর এই ঘটনায় আহত হয় আরও বারো জন। মূলত গরিব ও অসহায় পরিবারগুলো পাহাড় দখল করে বসবাস করছে। আর বর্ষা আসলে পাহাড় ধসের শিকার হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে জান-মালের।
বান্দরবানের পরিবেশবাদী ও আদিবাসী নেতা জুয়াম লিয়ান আমলাই বলেন, পাহাড়ে বসবাস ও ঘর-বাড়ি তৈরি করার ব্যাপারে নিয়ম কানুন মানতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করতে হবে নিজ নিজ আবাসস্থল ।
বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জানান, শুধু পাহাড় কাটা নয়, অবাধে বনের গাছ কাটা, বন্য প্রাণী নিধন সব কিছুই পাহাড় ধসের জন্য দায়ী। গাছ কেটে পাঁচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। আবার বন্য প্রাণী ধরতে পারলেই খেয়ে ফেলছে এখানকার কিছু সম্প্রদায়ের লোক। এসব কিছুই পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে যাতে লোকজন বসবাস করতে না পারে এবং কেউ যেন অবাধে পাহাড় কাটতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কেউ পাহাড় কাটছে খবর পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যত্রতত্র বনাঞ্চল উজাড়, অবাধে পাহাড় কাটা বন্ধ, পরিকল্পতভাবে বনায়ন ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পূর্ণবাসন করা গেলে পাহাড় ধস কমে আসবে। জীবন ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: সেতু আছে, সংযোগ সড়ক নেই!