‘ছোটবেলায় খেলাধুলায় তেমন একটা ঝোঁক ছিল না অয়নের। তবে লেখালেখির প্রতি সে খুব মনোযোগী ছিল। তখন তার কিছু লেখা পড়তে গিয়ে দেখেছি, তাতে সে দেশ, প্রকৃতি, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তুলে এনেছে। অয়নের হাতের লেখা ছিল খুবই সুন্দর। স্কুলে পড়াকালীন সে দেয়াল পত্রিকা বের করতো। ১৯৯৭ সালের দিকে সে হাতে লেখা বই বের করেছিল। বইটার নাম ছিল বাংলা পেলাম। এই বইয়ের লেখা পড়ে বুঝেছিলাম, সে দেশ ও বঙ্গবন্ধুকে প্রচণ্ড ভালোবাসে।’ বরগুনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমন সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন তার মামা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনজুরুল হক।
রবিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের পিএন স্কুল মোড় এলাকায় তারিক সালমনের নানা বাড়িতে মামা মনজুরুল হকের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদকের।
তার কাছ থেকে জানা যায়, গাজী তারিক সালমনের ডাকনাম অয়ন, যে ছোটকাল থেকে নানান সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে জড়িত। মনজুরুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য ছোটবেলা থেকেই অয়নের অগাধ ভালোবাসা। যখন শুনলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে অয়নকে জেলে নেওয়া হয়েছে, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। মামলা থেকে অয়ন অব্যাহতি পাওয়ায় অনেক খুশি হয়েছি।’
মনজুরুল হকের কাছ থেকে জানা যায়, তারিক সালমনের দাদার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুরে। তার বাবা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টর (ডিডি) ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে তারিক সালমনকে দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে হয়েছে। আব্দুর রহমান ও তার স্ত্রী নাছিম বানু বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের মুন্সিপাড়ায় ‘অন্বেষণ’ নামের বাড়িতে বসবাস করছেন। আব্দুর রহমান ও নাছিম বানু দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তারিক সালমন বড়। সালমানের ছোট বোন সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেছেন।
মনজুরুল হক আরও জানান, তারিকের বাবা-মা সাতক্ষীরার আশশুনি উপজেলায় থাকার সময় তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। পরে যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা ও সাতক্ষীরা বালক উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে যশোর জিলা স্কুল থেকে ১৯৯৯ সালে তারিক এসএসসি পাস করে। যশোর ক্যান্টমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। সেখান থেকে মাস্টার্স পাস করার পরে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করে সে।
সালমনের বড় মামি মিলি আফরোজা বলেন, ‘সাতক্ষীরা শহরের পিএন স্কুল মোড় এলাকায় নানাবাড়িতে অয়নের জন্ম হয়। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। সে বই কিনতে খুব পছন্দ করতো। ঈদের সময় শার্ট-প্যান্ট না কিনে সে বই কিনতো।’
মিলি আফরোজার দাবি, ‘স্কুলে এক প্রতিযোগিতায় অয়ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচনা লিখে প্রথম স্থান অধিকার করে। সেই শৈশব থেকেই সে হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে আসছে। ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখে সে। স্কুলে দেয়াল পত্রিকাও বের করতো। আর সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় সে কয়েকবার জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে দীপের কিছু স্মৃতির সঙ্গে অয়নের ছোটবেলার কিছু লেখা যত্ন করে আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম। এটা অয়ন নিজেও হয়তো জানে না। অয়নের বড় মামা মনজুরু হক গান করেন। হাতের লেখা সুন্দর হওয়ায় মনজুরু হক অয়নকে ডায়েরিতে গান লিখে দিতে বলতেন। এর একটা কারণ ছিল, সুন্দর হাতের লেখার স্মৃতিটা ধরে রাখা। দুই রকমভাবে অয়ন লিখতো। কখনও ভাবিনি, এগুলো কাজে লেগে যাবে। সেই অয়ন অব্যহতি পেয়েছে শুনে অনেক খুশি হয়েছি।’
/এমএ/বিএল/