X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

রুটির দোকানে কাজ করে জিপিএ-৫ পাওয়া বাঁধনের নাটকীয় জীবন!

আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
৩১ জুলাই ২০১৭, ০০:১৩আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৭, ০০:১৩

রুটির দোকানে কাজ করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন বাঁধন। ছবি-প্রতিনিধি

টানাপোড়েনের এক শৈশব আর নাটকীয় কৈশোর পার করে জীবন জয়ের স্বপ্ন দেখছেন আট বছর আগে বাড়ি পালানো ছেলেটি। অভাবের তাড়নায় ২০১০ সালে দরিদ্র বাবার বাড়ি থেকে পালানোর পর, ২০১৭ সালে এসে তার সামনে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার হাতছানি। নিয়মিত রুটির দোকানে কাজ করেও বাঁধনের জিপিএ-৫ পাওয়ার ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছে সিরাজগঞ্জে।

ছেলেটির নাম মেজবাহুল হাসান বাঁধন। এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে আলোড়ন তুলেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এক বেকারিতে কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন গত চার বছর ধরে। রুটির দোকানে কাজ করেও ২০১৫ সালে ৪.২৯ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালে জেএসসি পাস করার পর বাড়ি থেকে পালিয়ে যান বাঁধন। এরপর থেকে আর কোনও যোগাযোগ নাই বাড়ির সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলার সময় বাঁধন নিজেই জানান এ তথ্যগুলো।

বাঁধন বলেন, তার বাড়ি রংপুর জেলার মিঠাপুকুরে। সেখানকার জাইগীর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পাস করার পর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় তার। দিনমজুর বাবার অভাবের সংসারে লেখাপড়াকে বিলাসিতা মনে করে আয় রোজগারে মন দিতে বলা হয়েছিল তাকে। পাঁচ ভাই এক বোনের সংসারে প্রতিদিন খাবার যোগানোই কঠিন ছিল। তবুও লেখাপড়া বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মানতে পারেননি বাঁধন। অভিমানে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর বাড়ি থেকে পালিয়ে রাজশাহী চলে যান। সেখানকার একটি রুটির দোকানে শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন বাঁধন।

ছয় মাস সেখানে কাজ করার পর ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর কাজের বিনিময়ে তিন বেলার থাকা-খাওয়ার চুক্তিতে জাহাঙ্গীরের মালিকাধীন ‘ইউনুস বেকারি’ কাজ শুরু করেন তিনি। লেখাপড়ার প্রতি বাঁধনের আগ্রহের কথা জেনে কিছুদিন পর তাকে পূর্বদেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন বেকারি মালিক জাহাঙ্গীর। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বেকারিতে কাজ করে লেখাপড়া জন্য খুব একটা সময় পাওয়া যেত না বলেও জানান বাঁধন। এরপরও ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.২৯ অর্জন করেন তিনি। রেজাল্ট ভাল দেখে বাঁধনকে উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি করে দেওয়া হয়। কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামল কুমার বিশ্বাসের সুবাদে বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা হয় সেখানে। পরবর্তীতে এইচএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণের টাকাও দেন এ অধ্যক্ষ।

বাঁধন। ছবি-প্রতিনিধি

এ ব্যাপারে বাঁধন বলেন, ‘শিক্ষকদের সহযোগিতার কারণেই ভাল রেজাল্ট করতে পেরেছি। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। বেকারির মহাজনের বাড়িতে থেকেই ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আর্থিক ব্যাপারে কিছুটা চিন্তা তো আছেই।’

বেকারি মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাবা-মাকে ছেড়ে ৮ বছর ধরে এখানে আছেন বাঁধন। তাকে নিজের সন্তানের মতোই দেখি। ভাল রেজাল্ট করেছে। সামনে আরও ভাল করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বর্তমানে আমার বেকারি বন্ধ। বাঁধন তাই রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।   

উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, বাঁধন আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে কথা বলে বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। বাঁধন সামনে ভাল কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু তার লেখাপড়ার খরচের ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন।

এএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রেন ছাড়ছে না সময়মতো, যাত্রীদের ভোগান্তি
ট্রেন ছাড়ছে না সময়মতো, যাত্রীদের ভোগান্তি
সুন্দরবনে ২২ বছরে ৩২ বার আগুন, তদন্ত হলেও সমাধান নেই
সুন্দরবনে ২২ বছরে ৩২ বার আগুন, তদন্ত হলেও সমাধান নেই
বাজেটে প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৫ হাজার করাসহ ১১ দাবি
বাজেটে প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৫ হাজার করাসহ ১১ দাবি
দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, আটক ২ সহস্রাধিক
দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, আটক ২ সহস্রাধিক
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি