এ বছরের বন্যায় নওগাঁ জেলায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে চার হাজার পাঁচশ’ ১৯ কোটি ৪০ লাখ ৭৪ হাজার ৪০ টাকা। জেলা প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমান জানিয়েছেন বুধবার (৩০ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, জেলার ১১টি উপজেলাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার মোট ৯৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭২টি ইউনিয়নের পাঁচশ’ ৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে ৯৬ হাজার ছয়শ’ ২৫টি পরিবারের চার লাখ ৭৪ হাজার ছয়শ’ ৫৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ৯৩ হাজার চারশ’ বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। এগুলোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছয়শ’ ৭৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষসূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলায় তিন হাজার চারশ’ ১৫ জন চাষির মোট তিন হাজার চারশ’ ১৫টি পুকুর, দীঘি এবং খামারের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর,দীঘি ও খমারের আয়তন এক হাজার ১৫ দশমিক ৭৮ হেক্টর। এসবের অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ সর্বমোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন ছয়শ’ ৬০টি অগভীর বা তারা নলকূপ এবং পাঁচ হাজার আটশ’টি স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় দুই কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় চলতি বছরের বন্যায় এক দশমিক একশ’ ৩৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সম্পূর্ণভাবে এবং ১১ দশমিক দুইশ’ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
গণপূর্ত বিভাগের আওতায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বাসভবন, সার্কিট হাউস, এসপি অফিস ও বাসভবন, জেলা কারাগার, ভীমপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, বিভিন্ন উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অভ্যন্তরীণ রাস্তা,টয়লেট, সেফটি ট্যাংক, অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক ও ফায়ার সার্ভিসের ওভার হেড লাইন, ড্রেনের ক্ষতি হয়েছে। এসবের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি ৯০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
জেলায় সড়ক বিভাগের মোট দুইশ’ ৪৪ দশমকি ৭০ মিটার সড়ক এবং বিভিন্ন সড়কের পেভমেন্ট ও সোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসবের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মোট ৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী, বন্যায় ৩২ হাজার ছয়শ’ ৩৭ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ১১ হাজার দুইশ’ ৪৩ হেক্টর জমির আউশ ধান এবং একশ’ ৯৫ হেক্টর জমির শাক-সবজি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের আর্থিক মুল্য চারশ’ ৭৮ কোটি ৭৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় জেলায় মোট একশ’ ৬৮ দশমিক শূন্য দুই কিলোমিটার সড়ক এবং একশ’ ৩৪ মিটার ব্রিজ কার্লভাট নষ্ট হয়েছে। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৮ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসেব অনুযায়ী, মোটএকশ’ ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৮৮ লাখ টাকা।
বন্যাজনিত কারণে মোরগ-মুরগির মৃত্যু, চারণভূমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা ঘাস নষ্ট, গবাদি পশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত, হাঁসমুরগির খামাড় নষ্ট, পশুপাখির দানাদার খাদ্য নষ্ট ও শুকনো খড় নষ্ট হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭৮ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় মোট এক হাজার দুইশ’ ৩০টি গভীর নলকূপ, এক হাজার দুইশ’ ৬৩টি সেচনালা, ২২ হাজার ৮শ’ ৬৮ হেক্টর ফসলের জমি এবং ৬৮ কিলোমিটার সড়ক এবং এক লাখ আট হাজার ৭৩টি রোপিত বৃক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ তিন হাজার তিনশ’ ৩৭ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০ টাকা।
এ ছাড়াও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়ালে ফাটল, মেঝে দেবে যাওয়া ও মাটি সরে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ টাকা।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতির বিবরণ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে। এ ব্যপারে সরকার খুবই ইতিবাচক। ইতোমধ্যে জরুরি ত্রাণ হিসেবে ছয়শ’ ৮৯ দশমিক পাঁচশ’ মেট্রিকটন চাল এবং ২৫ লাখ ৯৫ হাজার পাঁচশ’ টাকা দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রেরণ করা হয়েছে।