বিদ্যুৎ চুরির প্রমাণ পেয়ে দেড় কোটি টাকা জরিমানা করে তা চার বছরেও আদায় করতে পারেনি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। ঠাকুরগাঁও শহরের ব্যবসায়ী ওসমান আলীর রাহবার হিমাগার নামের তিনটি কোল্ড স্টোরেজে অনৈতিকভাবে বিদ্যুৎ চুরির প্রমাণ পাওয়ায় ওই জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু গত চার বছরেও রাহবার হিমাগার কর্তৃপক্ষ এই জরিমানা পরিশোধ করেনি। অভিযোগ উঠেছে, দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ-১-এর জেনারেল ম্যানেজারকে ‘ম্যানেজ’ করে জরিমানার টাকার পরিশোধ করছে না। তবে জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল হক বলছেন, হিমাগার কর্তৃপক্ষ জরিমানার কিস্তি পরিশোধ করছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের ব্যবসায়ী ওসমান আলীর রাহবার হিমাগার নামে তিনটি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিলে কারসাজির মাধ্যমে এসব কোল্ড স্টোরেজে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল অন্যান্য কোল্ড স্টোরেজের বিদ্যুৎ বিলের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ হিসাবে পরিশোধ করে আসছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
বিষয়টি বীরগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নজরে এলে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ (দিপবিস)-১-এর জেনারেল ম্যানেজারকে অবগত করা হয়। পরে দিপবিস-১ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই তদন্ত কমিটি রাহবার হিমাগারের বিদ্যুৎ মিটারের সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহার কম দেখানোর প্রমাণ পায়। পরে বিদ্যুৎ চুরির দায় স্বীকার করে রাহবার হিমাগার কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় রাহবার হিমাগারের তিনটি কোল্ড স্টোরেজকে দেড় কোটি টাকা জরিমানা করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। কিন্তু গত চার বছরেও রাহবার হিমাগার কর্তৃপক্ষ এই জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেনি। জরিমানার অর্থ আদায়ে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎও কোনও উদ্যোগ নেয়নি। অভিযোগ উঠেছে, দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ-১-এর জেনারেল ম্যানেজারকে ‘ম্যানেজ’ করেই এই জরিমানা ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ-১-এর আওতাধীন রাহবার হিমাগারের বিদ্যুৎ চুরির পুনরায় তদন্ত ও জরিমানার অর্থ পরিশোধের জন্য পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছাড়াও কয়েকটি দফতরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বৃহত্তর দিনাজপুরে ১৮টি কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যুতের ইউনিট অনুয়ায়ী বিল পরিশোধ করে আসছি। কিন্তু রাহবার হিমাগার দেড় কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দিয়েছে। তাদের এই টাকা জরিমানা করা হলেও সেটা পরিশোধ করছে না।’ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় পল্লী বিদ্যুতায়ন চেয়ারম্যানসহ কয়েকটি দফতরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাহবার হিমাগারের মালিক ওসমান আলী বলেন, ‘জরিমানার টাকা কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের চেষ্টা করছি। খুব শিগগিরই সব বিল পরিশোধ করা হবে।’
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ-১-এর জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হিমাগার কর্তৃপক্ষকে ৩৬ মাসের কিস্তিতে জরিমানা পরিশোধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড।’ দীর্ঘদিনেও জরিমানার টাকা পরিশোধ করার উদ্যোগ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্বে আছি। আমার জানামতে, হিমাগার কর্তৃপক্ষ কিস্তি পরিশোধ করছে।’
আরও পড়ুন-
সাভারে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ