X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষার মেলবন্ধন বেনাপোল সীমান্তে

সেলিম রেজা, বেনাপোল
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:৪৭আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:৩৩

বেনাপোল সীমান্তে ভাষার মেলবন্ধন ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে একই ভাষা ও সংস্কৃতির টানে দুই বাংলার মানুষ সমবেত হলেন বেনাপোলে। তারা একই মঞ্চে গাইলেন বাংলার জয়গান। হাতে হাত রেখে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলেন বাংলাকে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বেনাপোল চেকপোস্টের নো-ম্যানস ল্যান্ডে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সম্মিলিত হলেন দুই বাংলার মানুষ।

বেনাপোল চেকপোস্ট নো-ম্যানস ল্যান্ডে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর  মধ্য দিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথভাবে সম্মান জানানো হয়। এরপর মিষ্টি বিতরণ, আলোচনা সভা আর গানে গানে মাতোয়ারা হন সীমান্তের দুই পারের বাসিন্দারা। উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিরা বলেন সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কথা। বেনাপোল সীমান্তে ভাষার মেলবন্ধন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী। উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। নানা রংয়ের ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা। এ মিলন মেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি হয়। আর এই আয়োজনের নেতাদের কণ্ঠে ছিল ভবিষ্যতে আরও বড় করে একই মঞ্চে একুশ উদযাপনের প্রত্যাশা। 

২০০২ সাল থেকে প্রতি বছরই দুই বাংলার সীমান্তবর্তী এ অংশের বাসিন্দারা একসঙ্গে মিলিত হয়ে দিবসটি পালন করেন। তখন দুই দেশের সীমান্তবর্তী ওই স্থানে আবেগাপ্লুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সব ভেদাভেদ যেন ভুলে যান কিছু সময়ের জন্য। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করেন অনেকে। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা। বেনাপোল সীমান্তে ভাষার মেলবন্ধন

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বনগাঁ লোকসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সভাধিপতি রেহেনা খাতুন, বনগাঁ উত্তর বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ দক্ষিণের বিধানসভার বিধায়ক সুরজিৎ দাসের নেতৃত্বে ভারত থেকে শতাধিক বাংলাভাষী মানুষ নো-ম্যানস ল্যান্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, যশোর ৪৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ মারাফুর রহমান, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান। এ সময় দুই দেশের মানুষ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেন একে অপরকে। নো-ম্যানস ল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে প্রথমে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকসহ ভারত থেকে আসা প্রতিনিধিরা। পরে বাংলাদেশের পক্ষে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্যসহ অন্যরা। ২১ শে’র মঞ্চে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ও বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য। বেনাপোল সীমান্তে ভাষার মেলবন্ধন

ভাষা দিবসের মিলনমেলায় বিজিবি বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছ জানায়। এরপর দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করেন।

একুশ উদযাপন কমিটির সভাপতি বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, ‘৫২-এর ভাষা সংগ্রামের পথ ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জনগণ ও সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ব্রিটিশরাও আমাদের বাংলা ভাষাকে বিভক্ত করতে পারেনি। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে আমাদের এই ভাষা আন্দোলন। দেশের সন্তানরা জীবন দিয়ে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।  ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিতকে আরও শক্ত করবে।’  বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বিনিময়

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আপনারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ভাষা আর স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগের নজির পৃথিবীতে অন্য কোনও দেশে নেই। এ জন্য আপনারা গর্বিত জাতি। ভাষার টানে আমরা বাংলাদেশে ছুটে এসেছি একুশ উদযাপন করতে। দুই বাংলার মানুষ একসঙ্গে মাতৃভাষা দিবস পালন করছে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ভবিষ্যতে দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের সঙ্গে নিয়ে আরও বড় করে একুশ উদযাপন করবো এটাই আমার প্রত্যাশা।’

মঞ্চে একুশের কবিতা আবৃত্তি, ছড়া, গীতিনাট্য, আলোচনা আর সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভাষা শহীদদের স্মরণে দুই বাংলার মানুষের সম্প্রীতি আর ভালোবাসার বন্ধন আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে বিকালে শেষ হবে ভাষাপ্রেমীদের মিলন মেলা।

দুই বাংলার এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় সীমান্তে। বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিজিবি-বিএসএফ  দুই সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে। সীমান্ত টপকে যাতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ বাঁশের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

 

/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
দায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস আজদায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা
শাহীনের বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তানের সিরিজ ভাগাভাগি
শাহীনের বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তানের সিরিজ ভাগাভাগি
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু