শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সাধুরবাজার লঞ্চঘাট এলাকা মঙ্গলবার নদীতে ভেঙে পড়ার সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে আট জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের সন্ধানে নদীর তীরে আসা স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পদ্মা পাড়ের বাতাস। নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে বুধবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে তল্লাশি চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
নিখোঁজ আট জনেরই পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- নড়িয়ার উত্তর কেদারপুর গ্রামের শাহজাহান বেপারি (৭০), মজিবুর ছৈয়াল (৪৫), গুপী বাছার (৫৫), আব্দুর রশিদ হাওলাদার, মোশারফ চোকদার, কলুকাঠি গ্রামের নাছির বয়াতী (১৮), চাকধ গ্রামের নাছির হাওলাদার (৩৫) এবং বরিশালের নাজিরপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (২৭)।
বুধবার দুপুর ১১টার দিকে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নিতে দুর্ঘটনাস্থল যান জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের। তিনি নিখোঁজদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার কার্যক্রম চালু রাখার আশ্বাস দেন।
এদিকে সকাল থেকেই নিখোঁজদের সন্ধানে নদীর পাড়ে ভিড় জমাতে থাকেন স্বজনেরা। তাদের কান্না আর আহাজারি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অন্যরাও।
নিখোঁজ মজিবুর ছৈয়ালের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, তার স্বামী গাছ কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। ভাঙন এলাকার গাছ কেনার জন্য তিনি মঙ্গলবার দুপুরে সাধুরবাজার এসেছিলেন। কিন্তু লঞ্চঘাট এলাকা ধসে পড়ার পর থেকে তার আর কোনও খোঁজ নেই।
নিখোঁজ নাছির বয়াতীর মা নাজমা বেগম ছেলের শোকে শুধুই বিলাপ করছিলেন। তিনি জানান, ‘ছেলেটা কাঠমিস্ত্রির কাজ করতো। পেটের দায়ে নদীর পাড়ের ঘর ভাঙার কাজ করতে এসেছিল। মঙ্গলবার দুপুর থেকে তার কোনও খোঁজ নেই।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আট জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার তৎপরতা চলমান আছে। ভাঙন এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ নড়িয়ার কেদারপুর ইউনিয়নের সাধুরবাজার লঞ্চঘাট এলাকার বিশাল অংশ ধসে পড়ে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। লঞ্চঘাট এলাকায় থাকা ৬/৭টি ছোট দোকানঘরও এ সময় নদীতে তলিয়ে যায়। ঘটনার সময় সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৩৫/৪০ জন লোক ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত আট জন নিখোঁজ রয়েছেন।