X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাদন ব্যবসা: শিক্ষকের বেতন তোলেন মহাজন!

বগুড়া প্রতিনিধি
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৩১আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:১৯

দাদন ব্যবসা, ফাইল ছবি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় হাটকরমজা গ্রামের হরিজন সম্প্রদায়ের অবিনাশ। সংসারের প্রয়োজনে তিনি দাদন ব্যবসায়ী ডা. নির্মলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। ২ লাখ টাকা শোধ করার পরও তার ঋণ শোধ হয়নি। আরও টাকা দেওয়ার জন্য তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সোনাতলায় অবিনাশের মতো এমন অনেকেই আছেন, যারা দাদন ব্যবসায়ীর কোছ থেকে ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তারপরও দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় দিন দিন দাদন ব্যবসা বেড়েই চলেছে। এ ব্যবসার মহাজনদের খপ্পরে পড়ে শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। মাসের শুরুতে চাকরিজীবী দাদন নেওয়া লোকজনের বেতন তুলে নেয় মহাজনরা। সময়মতো সুদসহ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ অনেকে বাড়িঘর ও পরিবার ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা দাদন ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সোনাতলা উপজেলার পৌর এলাকা ও বিভিন্ন গ্রামে ছোট বড় ৫ শতাধিক দাদন ব্যবসায়ী রয়েছেন। এরা বংশানুক্রমে এ ব্যবসা করেন। এ উপজেলায় একটি সরকারি কলেজ, ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯টি মাদ্রাসা, ৬টি কারিগরি ও ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। তাদের অনেকে সংসারে অভাব, ঋণ পরিশোধ বা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছেন। ঋণ নেওয়ার জন্য তাদের বেতনের চেক বই ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে টাকা দিয়েছেন দাদন ব্যবসায়ীরা।
মাসিক শতকরা ২০ টাকা হারে এ ঋণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতি মাসে ১০০ টাকায় ২০ টাকা সুদ দিতে হয়। কোনও মাসে কিস্তি দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকে। এ ব্যবসা করে অনেকে গাড়ি, বাড়ি ও সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।

দাদন ব্যবসার প্রসার প্রসঙ্গে সোনাতলার ভেলুরপাড়ায় ড. এনামুল হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মালেক জানান, তার কলেজের অন্তত ২০ জন শিক্ষক ব্যাংকের স্বাক্ষর করা চেক জমা রেখে দাদন নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে শিক্ষকদের বাঁচাতে তিনি টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করে চেকগুলো উদ্ধার করে দিয়েছেন।

দাদন ব্যবসায়ীদের দাবি করা টাকা পরিশোধ করতে সৈয়দ আহম্মদ কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফজর আলী, সাবেক অফিস সহকারী মরহুম আব্দুস সামাদ, বয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক পোড়াপাইকর এলাকার মরহুম মোকাররম মাস্টার, জোড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মরহুম আব্দুল হালিম স্বেচ্ছায় অবসর নেন। দাদনের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ চরপাড়ার মঞ্জু মাস্টার ছাড়াও হাটকরমজা গ্রামের কয়েকজন মামলায় জড়িয়ে পরিবার-পরিজন ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, ঋণ নেওয়ার আগে দাদন ব্যবসায়ীর কাছে স্বাক্ষর করা চেক বা স্ট্যাম্প জমা রাখতে হয়। তারা চাকরি করলেও মাস শেষে ব্যাংক থেকে বেতনের টাকা তোলেন দাদন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দাদন ব্যবসায়ীদের সুসম্পর্ক থাকায় তারা সহজে টাকা তুলে নিতে পারে।

চরপাড়া গ্রামের শিক্ষক মঞ্জু মাস্টার জানান, তিনি এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার পরও তার ঋণ শোধ হয়নি। তাই তার নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।

এছাড়া হাবিবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষিকা একইভাবে দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে দাদন ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়ননি। নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দাদন ব্যবসায়ী জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক থেকে সিসি লোন নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।

তার দাবি, ব্যাংক থেকেও তাদের সুদের হার কম। আর ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া খুব কঠিন। কারণ, ব্যাংকের টাকা পরিশোধ হয় না। ঋণ নিতে ঘুষ দিতে হয়। বাড়িঘর বিক্রি করে পরিশোধ করতে হয়। তাই তারা (দাদন ব্যবসায়ী) দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে যাচ্ছেন।

দাদন ব্যবসা প্রসঙ্গে সোনাতলা থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, এর আগে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শিক্ষকদের চেক ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

/এসটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শীর্ষ ঋণখেলাপি লস্করের সম্পত্তি ওসির জিম্মায় দিলেন আদালত
শীর্ষ ঋণখেলাপি লস্করের সম্পত্তি ওসির জিম্মায় দিলেন আদালত
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকেও হিন্দুত্ববাদে ভরসা মোদির?
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকেও হিন্দুত্ববাদে ভরসা মোদির?
প্রথম ধাপের প্রার্থীদের ৫৬ শতাংশই ব্যবসায়ী: টিআইবি
উপজেলা নির্বাচনপ্রথম ধাপের প্রার্থীদের ৫৬ শতাংশই ব্যবসায়ী: টিআইবি
বিজেপি ও তৃণমূলের মাথাব্যথা এখন কম ভোটার উপস্থিতি
লোকসভা নির্বাচনবিজেপি ও তৃণমূলের মাথাব্যথা এখন কম ভোটার উপস্থিতি
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র