X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচা পাটের অভাবে খুলনার ৯টি পাটকলে ৬৯ ভাগ উৎপাদন হ্রাস

খুলনা প্রতিনিধি
১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৮আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:১২

পাটকল শ্রমিকরা কাজ করছেন

পাটকল শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাট মৌসুমে কাঁচা পাট ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় মিলগুলো মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচা পাট ক্রয় করতে পারে না। ফলে মিলগুলোতে কাঁচা পাটের ঘাটটি থেকে যায়। মিলগুলো দৈনিক ভিত্তিতে কাঁচা পাট কিনে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার কারণে খুলনা অঞ্চলের মিলগুলোর উৎপাদন ৬৯ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) খুলনা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত লিঁয়াজো কর্মকর্তা বণিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, ‘মিলগুলো যথাযথভাবে পাট কিনতে না পারার কারণে প্রয়োজনীয় উৎপাদন করতে পারছে না। এ কারণে মিলগুলোর উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন,‘উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকদের অনশনের কারণে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। গত ৪ দিনে অনশনের কারণে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রতিদিন পাটজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আলীম জুট মিলে দৈনিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে ৩ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্য মাত্রার ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কার্পেটিং জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ২ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ক্রিসেন্ট জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, উৎপাদন হচ্ছে ২৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। দৌলতপুর জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ১১ মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ২ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন। যার লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ইস্টার্ন জুট মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৩৪ মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৭ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজে (জেজেআই) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ২০ মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। খালিশপুর জুট মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ১২ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ দশমিক ৫৪ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ১৫ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। স্টার জুট মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৯ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

উৎপাদনে ব্যাস্ত পাটকল শ্রমিকরা

খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে দায়-দেনার পরিমাণ ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, মজুরি বাবদ ৪৮ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পাটকল সূত্রে জানা যায়, ৯টি মিলে  পিএফ বাবদ ৯২ কোটি ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, পাটের দেনা বাবদ ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ ৫ হাজার টাকা, ব্যাংকের কাছে ৫৬২ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৬৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেনা রয়েছে। সব মিলিয়ে মিলগুলোর দায়-দেনার পরিমাণ ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, পাটকলগুলোর উৎপাদিত ৩০ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন পণ্য এখনো মজুদ রয়েছে। যার মূল্য ২৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ সব কারণে মিলগুলো চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সময় মত প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে পারলে মিলগুলোর উৎপাদনে কোনও সমস্যা হতো না। আর মিলের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেও বেশি লাভ পাওয়া যেত। কিন্তু বেশি দাম দিয়ে কাঁচা পাট কেনার কারণে মিলগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, ‘পাটকলগুলো আর্থিক সংকটে থাকায় শ্রমিকরা কাজ করেও নিয়মিত মজুরি পাচ্ছে না। আর এ কারণেই আন্দোলন করতে হচ্ছে।’

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ নেতা মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের জন্যই আন্দোলন কমর্সূচি পালন করা হচ্ছে।’

প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা পাট ক্রয়ের বিষয়টি চিন্তায় নিতে হয়েছে। কারণ কাঁচা পাট না থাকলে তো শ্রমিকরা কাজ করতে পারবে না। তাই কাঁচা পাট কেনার ওপর জোর দিতে হচ্ছে ।’

স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান রইজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, মিলের শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহ আর কর্মচারীদের ২ মাসের বকেয়া মজুরি ও বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। যা ৪ ডিসেম্বরে শ্রমিকদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। শ্রমিকরা ওই টাকা উত্তোলনও করছেন। তবে কর্মকর্তাদের পাওনা টাকা মজুদ পাট পণ্য বিক্রি করে পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও ওই টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট ক্রয়ের নির্দেশনাও রয়েছে।

উল্লেখ্য, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে তারা টানা ৪দিন অনশন কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলনরত খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলো হচ্ছে, ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল, ইস্টার্ন জুট মিল, কার্পেটিং জুট মিল ও যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রি (জেজেআই)।

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!