সন্তান হারানোর ৯ বছর কেটে গেছে, তবে সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় তরতাজা ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মা জাহানারা বেগমকে। সন্তানের হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চান তারা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতের বিচারে বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষকে দুই বার খালাস দেওয়া হয়, তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে এখনও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন ফেলানীর বাবা-মা। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ফেলানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে মেয়ে হত্যার বিচার নিয়ে এমনই প্রত্যাশার কথা জানান তারা।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফেলানীর বাবার অনুরোধ, সরকার যেন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচারে সহায়তা করে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামে নিজ বাড়িতে ফেলানীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করে তার পরিবার। এলাকায় একটি মুদি দোকান চালিয়ে সংসার চালান নুর ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৯ বছর কেটে গেলেও ফেলানীর স্মৃতি এতটুকু মুছে যায়নি। আমরা এখনও ন্যায়বিচারের আশা ছাড়িনি। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আমাদের মেয়ে হত্যার সুবিচার করে ঘাতক অমিয় ঘোষের শাস্তি দেবে, এই আশা নিয়েই বেঁচে আছি।’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি হালকা কুয়াশা ঘেরা সকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বাবার সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরছিল ফেলানী। তার বাবা আগেই সীমান্ত অতিক্রম করেন। পেছনে থাকা ফেলানীকে লক্ষ্য করে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি করেন, ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। ১৪ বছর বয়সী মেয়েটির মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এরপর দুই দিন দফায় দফায় পতাকা বৈঠকের পর বিএসএফ মরদেহটি বিজিবির কাছে ফেরত দেয়। পরে তাকে দাফন করা হয় নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের পৈতৃক ভিটায়।
ভারত সরকার ফেলানীর হত্যাকাণ্ডটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ ছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুতবিচারে চাপ দেওয়া হয়। পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতে ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। ফেলানীর বাবা-মা রায় প্রত্যাখ্যান করলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারত। পরের বছর ২ জুলাই অভিযুক্তকে আবারও নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতের পুনর্বিচারের রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও কলকাতার মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চে’র সাধারণ সম্পাদক কিরিটি রায় যৌথভাবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করলে ২০১৫ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি শেষে রিট আবেদনটি গ্রহণ করে বিবাদীদের জবাব দেওয়ার নোটিশ জারির আদেশ দেন। পরবর্তীতে বিবাদীরা তাদের জবাব দাখিলও করেছেন। কিন্তু এরপর তারিখের পর তারিখ পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু শুনানি এখনও হয়নি। এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট ফেলানীর বাবা ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী একটি রিট আবেদন করেন ভারতের উচ্চ আদালতে। সেটিরও কোনও শুনানি হয়নি।