কলেজছাত্রী ফারিয়া আক্তার মালা হত্যা মামলায় প্রধান আসামিকে ফাঁসি, একজনকে যাবজ্জীবন এবং অপর একজনকে সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন বরগুনার নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মামলার আরেক আসামি ইমা রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে বিচারক মো. হাফিজুর রহমান ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এই রায় দেন।
রায় ঘোষণাকালে আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কমলকান্তি দাস, আবদুর রহমান নান্টু ও হুমায়ুন কবির।
এ মামলায় প্রধান আসামি প্রভাষক আলমগীর হোসেন পলাশকে ফাঁসি, অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান তালুকদার বিপ্লবকে যাবজ্জীবন এবং রিয়াজকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পলাশ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের আবদুল লতিফ হাওলাদারের ছেলে। বিপ্লব, তার স্ত্রী ইমা রহমান ও রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের মেয়ে কলাপাড়া মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া আক্তার মালার সঙ্গে বরগুনার ঘটবাড়িয়া আদর্শ কলেজের প্রভাষক আলমগীর হোসেন পলাশের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সাত বছর আগে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে পলাশের সঙ্গে মালার পরিচয়। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর মালাকে নিয়ে পলাশ তার ভাগনিজামাই আমতলীর হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. মাঈনুল আহসান বিপ্লব তালুকদারের বাসায় বেড়াতে আসে। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ছেলেকে নিয়ে বিপ্লবের স্ত্রী স্কুলে যায়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মালাকে ধারালো বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পলাশ। এরপর লাশ সাত টুকরো করে ড্রামে ভরে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ বিপ্লব তালুকদারের বাসার ড্রাম থেকে নিহত মালার টুকরো মরদেহ উদ্ধার এবং ঘাতক পলাশকে গ্রেফতার করে।
এ ঘটনায় ২৫ অক্টোবর পুলিশ বাদী হয়ে আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার পরের দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় পলাশ। তদন্ত শেষে পুলিশ এ মামলায় পলাশ, বিপ্লব, রিয়াজ ও বিপ্লবের স্ত্রী ইমা রহমানকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘বরগুনার চাঞ্চল্যকর ফারিয়া আক্তার মালা হত্যা মামলায় প্রধান আসামি আলমগীর হোসেন পলাশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ শেষে হত্যা করায় ফাঁসির আদেশ এবং হত্যার পরে লাশ গোপন করায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার দুই নম্বর আসামি মাইনুল আহসান তালুকদার বিপ্লব মালাকে ধর্ষণ করায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং লাশ সাত টুকরো করে গোপন করার চেষ্টা করায় সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার তিন নম্বর আসামি রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজকে লাশ গোপনে সহযোগিতা করায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং বিপ্লবের স্ত্রী ইমা রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারক মো. হাফিজুর রহমান।’
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ মামলায় বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আলমগীর হোসেন পলাশের যে স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া হয়েছে তাতে সে খুনের কথা স্বীকার করেনি। আমরা সংক্ষুব্ধ এবং উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।’
আরও পড়ুন: বরগুনায় কলেজছাত্রীর সাত খণ্ড লাশ উদ্ধার
