লন্ডন থেকে ফিরে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে যোগদান করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। বিদেশফেরতদের ব্যাপারে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তিনি এসব মানেননি। এমনকি অন্যদের বেলায় বিমানবন্দরে থাকা মেডিক্যাল টিমের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নানা নির্দেশনা থাকলেও তার বেলায় এসব কিছু মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে বদর উদ্দিন কামরান বলছেন, তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা জানতেন না। ঘর থেকে আর বের হবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকায় বুধবার (১৮ মার্চ) সিলেটের ছাতক, মৌলভীবাজার ও লাখাইয়ের পাঁচ প্রবাসীকে অর্থদণ্ড করা হয়। সিলেট বিভাগের চার জেলায় ৬৩৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান লন্ডনে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গত ১৪ মার্চ দেশে ফেরেন। গত মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কামরান। নিজের ফেসবুক আইডিতে সেই ছবিও পোস্ট করেন তিনি। বুধবার (১৮ মার্চ) বিকালে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভায়ও তিনি বক্তব্য রাখার ছবি প্রকাশ করেন। দলীয় সূত্র জানায়, ফেসবুকে এসব ছবি প্রকাশ করার পরই তাকে নিয়ে সিলেটসহ পুরো দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরের ছড়ারপাড়ায় তার বাসায় অবস্থান করছেন।
আর কোনও সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না উল্লেখ করে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লন্ডন থেকে গত ১৪ মার্চ সিলেট বিমানবন্দরে আসি। ওই সময়ে বিমানে আমাকে একটি হলুদ কার্ড দেয় স্বাস্থ্য তথ্যের জন্য। সেটি আমি পূরণ করে দেই। সিলেট বিমানবন্দরেও আমাকে চেকআপ করা হয়। তখন তারা আমাদের বলেনি যে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে বিদেশ থেকে আসলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এমনকি এ বিষয়ে আমি নিজেও জানি না। না জানার কারণেই আমি দলের অনুষ্ঠানে যোগ দেই।’ এখন কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আমি ঘরে আছি। কোনও অনুষ্ঠানে যাচ্ছি না। যেহেতু বিদেশফেরতদের ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে, তাই এটা মেনে চলবো।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক ও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাল্টিসেক্টরাল কমিটির প্রধান এম কাজী এমদাদুল ইসলামের কাছে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে সরকার করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি।’
সিলেটের সিভিল সার্জন ও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাল্টিসেক্টরাল কমিটির সদস্য সচিব ড. প্রেমানন্দ মন্ডলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় জানান, ‘করোনা ভাইরাসের মধ্যে লন্ডন থেকে কিংবা অন্যান্য দেশ থেকে যারা আসবেন তাদের অবশ্যই নিয়ম মেনে চলা উচিত ছিল। কারণ যেকোনও সময় অসচেতনতার কারণে অন্যদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’ কামরান লন্ডন থেকে সিলেটে এসে কীভাবে সভায় যোগ দিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে তিনি লন্ডন থেকে এসে আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। এছাড়া তিনি অন্য কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে থাকলে তা আমার জানা নেই।’
লন্ডন থেকে এসে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সরকারের নির্দেশনা না মেনে দলীয় সভায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, এ বিষয়ে কোনও কিছু তার জানা নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আইন থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রয়োগের অভাব রয়েছে। সবাইকে সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে যারা করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে নিয়ম মেনে চলবেন না, তাদের খুঁজে বের করে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জরিমানা করা প্রয়োজন। তাহলে অন্যরা আরও বেশি সচেতন হবে।’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সরকার যখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের সচেতন হয়ে চলাফেরা করতে হবে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের নিয়মকানুন মেনে চলা আবশ্যক।’
এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সিলেটে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (১৮ মার্চ) রাতে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এ সিদ্ধান্ত নেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘২০ দিনের অনুষ্ঠানমালায় ১২ দিন অনুষ্ঠান করেছি। এছাড়া সহযোগী সাতটি সংগঠনসহ আমাদের আরও আটটি অনুষ্ঠান ছিল ২৬ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে আপাতত অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও অনুষ্ঠান করা হবে।’
আরও পড়ুন- লন্ডন থেকে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে না থেকে আ.লীগের সভায় কামরান